রাতদিন ওয়েবডেস্ক - পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোর সময় রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মন্ত্রীদের নিজ নিজ এলাকায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নবান্নে অনুষ্ঠিত পুজোর আগে শেষ মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এই বার্তা দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উৎসবের আবহে কেউ যেন কোনও প্ররোচনায় পা না দেন এবং প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে পুজো পালন করতে হবে।নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কোনওভাবেই যাতে গন্ডগোল না হয়, তার দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এবিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি মন্ত্রীদের গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু দলের তহবিল নয়, ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকেও অসহায়দের সাহায্য করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মহালয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুজোর সূচনা হয়ে যায়। কলকাতা থেকে জেলা—সব জায়গায় এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এই প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে দলের মন্ত্রী ও বিধায়কদের করণীয় নির্দিষ্ট করে দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখেই সকলে উৎসবে শামিল হোন। দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি সতর্ক করে দেন, কোনও বিষয়ে হঠাৎ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। “আপনারা সরকার ও দলেরই অংশ, তাই মুখ খুলবেন বুঝে, পরিস্থিতি বুঝে মন্তব্য করবেন,”—এমনই পরামর্শ দেন তিনি।তিনি আরও বলেন, পুজোর সময় এলাকায় থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে। কোনওভাবেই যাতে অশান্তি না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। দলের ভিতরে মতবিরোধ থাকলেও তা প্রকাশ্যে না আনার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।পুজোর আবহকে কাজে লাগিয়ে জনসংযোগ বাড়ানোরও পরামর্শ দেন তিনি। মন্ত্রীদের বলেন, উৎসবের সময় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, তাদের সমস্যার কথা শুনুন এবং সমাধানের চেষ্টা করুন।
মন্ত্রীদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আপনারা এলাকার মানুষের প্রতিনিধি। তাই উৎসবের সময় তাদের পাশে থাকাটা শুধু দায়িত্ব নয়, মানবিক কর্তব্যও।” তিনি জানান, পুজোর সময় অনেক মানুষ সমস্যায় পড়েন—বিদ্যুৎ, জল, নিরাপত্তা, যানজট ইত্যাদি বিষয়ে। এইসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।তিনি প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার ওপর জোর দেন। বলেন, “পুজোর সময় পুলিশ, পুরসভা, বিদ্যুৎ দপ্তর, স্বাস্থ্য বিভাগ—সবাই একসঙ্গে কাজ করবে। মন্ত্রীদেরও সেই সমন্বয় রক্ষা করতে হবে।”
নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী পুজোর সময় প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা মনিটরিং টিম গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এই টিমে থাকবেন প্রশাসনিক আধিকারিক, পুলিশ প্রতিনিধি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। তাদের কাজ হবে দ্রুত সমস্যার সমাধান এবং রিপোর্ট নবান্নে পাঠানো।তিনি বলেন, “পুজো শুধু আনন্দ নয়, এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। তাই এই সময় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা গোটা রাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।” সেই কারণে তিনি মন্ত্রীদের দায়িত্বশীল আচরণের ওপর জোর দেন।
পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী উৎসবের সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন। বলেন, “ভুয়ো খবর, গুজব ছড়ানো বা উসকানিমূলক পোস্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।” তিনি জানান, সাইবার সেলকে এই বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে।মন্ত্রীদের উৎসবের সময় স্থানীয় ক্লাব ও পুজো কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “এই কমিটিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় থাকলে অনেক সমস্যার আগেই সমাধান সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “পুজো মানেই ভিড়, যানজট, শব্দদূষণ। তাই পরিবেশ রক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।” মন্ত্রীদের এই বিষয়ে সচেতন থাকতে বলেন তিনি।পুজোর সময় রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পর্যটকদের আগমন বাড়ে। সেই প্রেক্ষাপটে মুখ্যমন্ত্রী পর্যটন দপ্তরকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করা যায়। মন্ত্রীদেরও পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বলেন তিনি।