রাতদিন ওয়েবডেস্ক - কলকাতার বহু প্রতীক্ষিত গড়িয়া থেকে এয়ারপোর্টগামী মেট্রো প্রকল্পে চিংড়িহাটা অংশের জট অবশেষে কাটতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা এই গুরুত্বপূর্ণ অংশের কাজ দ্রুত শুরু করার পথ খুলেছে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে। আদালতের নির্দেশে ৯ সেপ্টেম্বর মেট্রোরেল ভবনে রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (RVNL) ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের বৈঠকে সমঝোতা হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুর্গাপুজোর সময় কোনও ট্রাফিক ব্লক না নিয়ে উৎসবের ভিড় এড়িয়ে নভেম্বরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহান্তে কাজ হবে।
RVNL জানিয়েছে, সব কিছু পরিকল্পনা মতো এগোলে আগামী ৯ মাসের মধ্যে, অর্থাৎ ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বেলেঘাটা থেকে আইটি সেন্টার পর্যন্ত কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এই অংশ সম্পূর্ণ হলে নিউ গড়িয়া–এয়ারপোর্ট করিডরের বড় বাধা দূর হবে। বর্তমানে নিউ গড়িয়া থেকে রুবি পর্যন্ত চলাচল শুরু হয়েছে, রুবি থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত ট্রায়াল চলছে। বাকি অংশের মধ্যে চিংড়িহাটার ৩৬৬ মিটার ভায়াডাক্টই ছিল প্রধান অন্তরায়।প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের মতে, চিংড়িহাটা ক্রসিংয়ে পিয়ার ৩১৭ থেকে ৩১৯ পর্যন্ত দুটি স্প্যান বসানোর জন্য রাতের ট্রাফিক ব্লক প্রয়োজন। রাজ্য সরকার সপ্তাহান্তের রাতে তিন ঘণ্টার দুটি ব্লকের প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে যান চলাচলে কম প্রভাব পড়ে। এই প্রস্তাবে সব পক্ষই রাজি হয়েছে।
বিচারপতি সুজয় পালের ডিভিশন বেঞ্চ এই অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বেঞ্চ আশা করছে, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে এবং কোনও নতুন সমস্যা দেখা দিলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যাবে। প্রকল্পটি ২০১১ সালে শুরু হলেও জমি ও অনুমতির জটিলতায় বহুবার পিছিয়েছে।৩২ কিলোমিটারের এই অরেঞ্জ লাইন নিউ গড়িয়া থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যাবে, পথে সেক্টর ফাইভ, নিউটাউন, সিটি সেন্টার টু, এয়ারপোর্টের নতুন আন্ডারগ্রাউন্ড হাব স্টেশন যুক্ত হবে। সম্পূর্ণ হলে এটি হবে ভারতের বৃহত্তম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো টার্মিনাল, যেখানে তিনটি করিডর মিলিত হবে।
নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে নির্মাণের গতি ও নির্ভুলতা একসঙ্গে নিশ্চিত করা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ টানেল খননে জার্মান প্রযুক্তি ব্যবহার করছে রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড। প্রতিটি স্প্যান বসানোর আগে ডিজিটাল স্ক্যানিংয়ে মাটি ও কাঠামো যাচাই হচ্ছে। প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তি দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে দেয়। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত কংক্রিটের মান নিয়মিত পরীক্ষায় পাশ করছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের মতে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সময়সীমা রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখছে। এই ধাপে কাজের গতি ও নিরাপত্তা একসঙ্গে বজায় রাখা হচ্ছে।
শহর পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রকল্প একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। নিউটাউন ও সেক্টর ফাইভের সঙ্গে এয়ারপোর্টের সংযোগ আরও মজবুত হবে। যাত্রীদের জন্য কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর সুযোগ তৈরি হবে। পরিবেশবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থায় শহরের কার্বন নিঃসরণ কমবে। পরিকল্পনাকারীরা বলছেন, ভবিষ্যতের ট্রাফিক চাপ কমাতে এই করিডর গুরুত্বপূর্ণ। শহরের পূর্বাংশে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বাড়াতে এই সংযোগ বড় ভূমিকা নেবে। প্রকল্পটি শহরের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।