রাতদিন ওয়েবডেস্ক - পুজোর আগে রাজ্যের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বড়সড় পদক্ষেপ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে অনুষ্ঠিত ৭৯তম মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিল্প, অবকাঠামো, জনসংযোগ ও প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎসবের সময়ে মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ বজায় রাখাই এখন অগ্রাধিকার।শিল্পক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঘোষণা এসেছে লজিস্টিকস খাতকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্তে। এর ফলে উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গে পণ্য পরিবহন ও গুদামজাতকরণ সংক্রান্ত বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরাসরি কর্মসংস্থানের নতুন দরজা খুলবে। একই সঙ্গে, তাজপুর-ডানকুনি-রঘুনাথপুর ইকোনমিক করিডর গড়ে তুলতে পশ্চিম বর্ধমানের হিরাপুর থানা এলাকার ১৯৩.৭ একর জমি পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমকে (WBIDC) হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে মন্ত্রীদের উদ্দেশে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, পুজোর সময়ে প্রত্যেককে নিজ নিজ এলাকায় থাকতে হবে। এর ফলে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আরও দৃঢ় হবে এবং যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি মন্ত্রীদের শান্তি বজায় রাখা, দরিদ্রদের সাহায্য করা এবং উৎসবের সময়ে প্রশাসনিক তৎপরতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।বৈঠকে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বারুইপুর টাউনশিপে দীর্ঘদিনের জমি সংক্রান্ত মামলা আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি, কলকাতার চেতলা আশ্রয় প্রকল্পে ফ্ল্যাট ও গ্যারাজ বরাদ্দ, পশ্চিমবঙ্গ ইনফ্লুয়েন্সার এনগেজমেন্ট নীতি গ্রহণ, কৃষি আয়কর বিভাগে পরিদর্শক পদে নিয়োগ এবং নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটিতে ১৫টি নতুন পদ সৃষ্টির অনুমোদন।
শিল্পোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, WBIDC-কে জমি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত রাজ্যের শিল্প বিনিয়োগের মানচিত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তাজপুর-ডানকুনি-রঘুনাথপুর করিডরকে কেন্দ্র করে একাধিক শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে শুধু পশ্চিম বর্ধমান নয়, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া জেলাও উপকৃত হবে।লজিস্টিকস খাতকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়ার ফলে গুদাম, কোল্ড স্টোরেজ, পরিবহন ও সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্তে রাজ্যে বেসরকারি ও বহুজাতিক সংস্থার আগ্রহ বাড়বে। পাশাপাশি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্যও নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
জনসংযোগের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। পুজোর সময়ে মন্ত্রীদের এলাকায় থাকার নির্দেশকে শাসক দলের তৃণমূল স্তরে সংগঠন মজবুত করার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এতে স্থানীয় সমস্যা দ্রুত সমাধানের সুযোগ তৈরি হবে এবং ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বাড়বে।প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটিতে ১৫টি নতুন পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে নিউটাউনের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক পরিষেবা প্রদানে গতি আসবে। কৃষি আয়কর বিভাগে পরিদর্শক নিয়োগের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ প্রক্রিয়া আরও কার্যকর হবে।
বারুইপুর টাউনশিপের জমি সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে বলে মনে করছেন রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘদিনের আইনি জট কেটে গেলে আবাসন ও বাণিজ্যিক প্রকল্পে গতি আসবে।চেতলা আশ্রয় প্রকল্পে ফ্ল্যাট ও গ্যারাজ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত শহরের নিম্নআয়ের মানুষের জন্য স্বস্তির খবর। এর ফলে বহু পরিবার স্থায়ী ঠিকানা পাবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
পশ্চিমবঙ্গ ইনফ্লুয়েন্সার এনগেজমেন্ট নীতি গ্রহণের মাধ্যমে রাজ্য সরকার ডিজিটাল প্রচার ও জনসংযোগে নতুন দিগন্ত খুলতে চাইছে। এই নীতির আওতায় সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালীদের সরকারি প্রচারে যুক্ত করা হবে।বিশেষজ্ঞদের মতে, নবান্নের এই বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো রাজ্যের শিল্প, প্রশাসন ও সামাজিক পরিসরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। শিল্প বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনসংযোগ—সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।