রাতদিন ওয়েবডেস্ক - জনপ্রিয় গায়ক ও সুরকার জুবিন গর্গের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সংগীতজগৎ ও ভক্তরা। ৫২ বছর বয়সী এই শিল্পী সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন এবং পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি সেখানে গিয়েছিলেন ২০ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত ‘ফোর্থ নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যাল’-এ পারফর্ম করতে। কিন্তু অনুষ্ঠানের আগেই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।উৎসবের আয়োজকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে সিঙ্গাপুরে ডাইভিং চলাকালীন জুবিনের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আইসিইউতে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু হলেও বিকেল সাড়ে ২টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আয়োজকদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটি আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং অনুষ্ঠান বাতিল করছি।”
এই ঘটনার পরই অসমের আইনজীবী রাতুল বোরা গুয়াহাটির মরিগাঁও থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি বলেছেন, উৎসবের ইভেন্ট ম্যানেজার শ্যামকানু মহন্ত যথাযথ নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও জুবিনকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যান। তাঁর দাবি, এই অবহেলাই গায়কের মৃত্যুর জন্য দায়ী। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগে ফৌজদারি গাফিলতির ধারাও যুক্ত হয়েছে। আইনজীবীর বক্তব্য, “একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পীকে এমন একটি বিপজ্জনক কার্যকলাপে যুক্ত করা উচিত ছিল না, বিশেষ করে যখন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি।” তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, কেন অনুষ্ঠান শুরুর আগেই তাঁকে স্কুবা ডাইভিংয়ে পাঠানো হল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে জুবিনের শেষ মুহূর্তের একটি ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি লাইফ জ্যাকেট পরে সমুদ্রে ঝাঁপ দিচ্ছেন, পরে নৌকায় ফিরে এসে জ্যাকেট খুলে আবার পানিতে নামছেন। দ্বিতীয়বার নামার পরই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। এই ভিডিও ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।সিঙ্গাপুর পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, স্থানীয় আসামি সম্প্রদায়ের কয়েকজন সদস্য তাঁকে ইয়ট ভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলেন, যার বিষয়ে উৎসব কর্তৃপক্ষের পূর্ব ধারণা ছিল না। আয়োজকদের দাবি, তাঁরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পৌঁছান এবং ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করেন।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে জানান, সিঙ্গাপুরে ময়নাতদন্ত শেষে জুবিনের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি লিখেছেন, “আমরা আশা করছি শনিবারের মধ্যে মরদেহ গৌহাটিতে পৌঁছবে, যাতে শেষ শ্রদ্ধা জানানো যায়।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তাঁর মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন।জুবিন গর্গের মৃত্যুতে সংগীতজগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বলিউড থেকে আঞ্চলিক সংগীতের শিল্পীরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সুরকার প্রীতম চক্রবর্তী লিখেছেন, “এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। তাঁর অবদান অসামান্য।” অভিনেতা আদিল হুসেন বলেছেন, “অসমের সংস্কৃতির এক স্তম্ভ ভেঙে পড়ল।”
১৯৭২ সালে জন্ম নেওয়া জুবিন গর্গ অসমিয়া, হিন্দি ও বাংলা গানে সমান জনপ্রিয় ছিলেন। বলিউডে ‘গ্যাংস্টার’ ছবির ‘ইয়া আলি’ গান তাঁকে জাতীয় খ্যাতি এনে দেয়। পাশাপাশি তিনি বহু বাংলা চলচ্চিত্রের জন্যও গান গেয়েছেন, যেমন ‘চোখের জলে’, ‘পিয়া রে পিয়া রে’।ভক্তদের কাছে জুবিন শুধু গায়ক নন, ছিলেন এক সাংস্কৃতিক দূত। নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যালের সাংস্কৃতিক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে তিনি উত্তর-পূর্ব ভারতের শিল্প, হস্তশিল্প ও সংগীতকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরতে কাজ করছিলেন। তাঁর মৃত্যু সেই প্রচেষ্টায় বড় শূন্যতা তৈরি করল।