Type Here to Get Search Results !

কেরলবাসীর চিঠি, ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার আটকানোর আর্জি

রাতদিন ওয়েবডেস্ক   - মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তি নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিল ভারতের কেরল রাজ্য। নোবেল কমিটির কাছে কেরলের একদল নাগরিক চিঠি লিখে দাবি করেছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি বিশ্বশান্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের মতে, তিনি বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন, যা শান্তি প্রতিষ্ঠার বদলে অশান্তি বাড়াচ্ছে।চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ট্রাম্প কে বা তিনি কতগুলি যুদ্ধ থামিয়েছেন, তা নিয়ে তাঁদের কোনও মন্তব্য নেই। মূল আপত্তি তাঁর একতরফা শুল্কনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়ে। কেরলবাসীর দাবি, এই নীতি শুধু বিশ্ব অর্থনীতিকেই নয়, তাঁদের রাজ্যের শিল্প ও শ্রমিকদের জীবন-জীবিকাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন। ভারত, চিন, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন—কেউই তাঁর এই নীতির বাইরে থাকেনি। কেরলের চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্ত বাণিজ্য শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য অপরিহার্য। দুটি বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পরই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা গঠিত হয়েছিল, যাতে দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়।কেরলের অর্থনীতিতে কাজু শিল্প ও সামুদ্রিক পণ্য রপ্তানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ফলে এই দুই খাতই ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বহু শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন, রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়ে ট্রাম্প কেরলের অর্থনীতিতে গভীর আঘাত হেনেছেন বলে অভিযোগ।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, একদিকে ট্রাম্প যুদ্ধ থামানোর দাবি করছেন, অন্যদিকে বাণিজ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিশ্বকে অশান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এই দ্বিচারিতা তাঁকে শান্তির নোবেলের মতো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারের অযোগ্য করে তুলেছে। কেরলবাসীর আর্জি, নোবেল কমিটি যেন ট্রাম্পের যে কোনও মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করে।কেরলের পক্ষ থেকে চিঠিতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরা হয়েছে। রাজ্যের হাজার বছরের বাণিজ্য ইতিহাস, যা সুমেরীয়, রোমান, চীনা ও আরব বণিকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল, শান্তি ও সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোচির ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে মুসলিম ব্যবসায়ীর বন্ধুত্বের গল্পও সেখানে স্থান পেয়েছে, যা বাণিজ্যের মাধ্যমে গড়ে ওঠা বিশ্বাস ও সহাবস্থানের প্রতীক।

নোবেল কমিটি অবশ্য জানিয়েছে, কোনও প্রার্থীকে নিয়ে জনমত বা প্রচার তাঁদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে না। প্রতিটি মনোনয়নই প্রার্থীর নিজস্ব যোগ্যতার ভিত্তিতে বিবেচিত হয়। কমিটির সচিব ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভিকেন বলেছেন, মিডিয়ার আলোচনার বাইরে গিয়ে তাঁরা নিরপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করেন।ট্রাম্পের নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও মতভেদ রয়েছে। কিছু বিদেশি নেতা তাঁর পক্ষে সওয়াল করলেও, সমালোচকরা মনে করেন তাঁর নীতি ও কর্মকাণ্ড শান্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রশংসা করা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কেরলের এই চিঠি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাণিজ্য ও শান্তির সম্পর্ক নিয়ে যে তত্ত্ব বহুদিন ধরে আলোচিত, কেরলবাসীর বক্তব্য তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁদের মতে, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ভেঙে গেলে শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যায়।চিঠিতে কেরলের বাণিজ্যিক ঐতিহ্যকে শান্তির মডেল হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বহিরাগত বণিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সহাবস্থানই প্রমাণ করে যে বাণিজ্য পারস্পরিক বিশ্বাস ও শান্তি গড়ে তুলতে পারে। ট্রাম্পের নীতি সেই বিশ্বাসকে ভেঙে দিচ্ছে।এই বিতর্কের প্রেক্ষিতে নোবেল কমিটির সিদ্ধান্ত কী হবে, তা সময়ই বলবে। তবে কেরলের এই পদক্ষেপ দেখিয়ে দিল, বিশ্বশান্তি নিয়ে আলোচনায় শুধু বড় শক্তিগুলিই নয়, ছোট রাজ্য ও সম্প্রদায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad