রাতদিন ওয়েবডেস্ক - জলঘেরা ছুটির দিন মানেই এখন আর নিশ্চিন্ত নয়, ব্রেন ইটিং অ্যামিবা বা নেগেলেরিয়া ফাউলেরি নিয়ে সতর্কতা জারি হয়েছে, চলতি বছরে অন্তত ঊনসত্তরটি নিশ্চিত সংক্রমণ ও উনিশটি মৃত্যু নথিভুক্ত, কিছু প্রতিবেদনে বাহাত্তরটি সংক্রমণের কথাও এসেছে, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি, স্বাস্থ্য দপ্তর বলছে এটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায় না, উষ্ণ স্থির মিঠে জলে থাকে, নাকে জল ঢুকলেই সংক্রমণ হয়, পান করে নয়, দ্রুত চিকিৎসা না পেলে রোগ প্রায়ই প্রাণঘাতী হয়।এই সংক্রমণের চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন, নিশ্চিত প্রতিকার নেই, কয়েকটি ওষুধের মিশ্র প্রোটোকল সীমিত সাফল্য দিলেও মৃত্যুহার খুব বেশি, বিশ্বজুড়ে মোট কেস তুলনায় নজিরবিহীন উত্থান নজরে এসেছে, কূপ, ট্যাঙ্ক ও পাবলিক জলাশয়ে ক্লোরিনেশন শুরু হয়েছে, সন্দেহভাজন মেনিনজাইটিস কেসে তৎক্ষণাৎ অ্যামিবা টেস্টিং নিয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে, নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
রোগটির মেডিক্যাল নাম প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোয়েন্সেফালাইটিস, সংক্ষেপে প্যাম, নেগেলেরিয়া ফাউলেরি নাকের ভেতর দিয়ে ঘ্রাণ স্নায়ুপথ ধরে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়, দ্রুত টিস্যু নষ্ট করে, স্ফীতি বাড়ে, কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি জটিল হয়, শুরুর উপসর্গ জ্বর, প্রবল মাথাব্যথা, বমি, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, পরে খিঁচুনি, বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন, কোমা পর্যন্ত যেতে পারে, সময়মতো সনাক্ত না হলে বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম।সর্বাধিক ঝুঁকি উষ্ণ, স্থির, অপরিষ্কৃত মিঠে জল, যেমন পুকুর, হ্রদ, নদীর ধীর স্রোত, অচোরিনেটেড পুল, অব্যবহৃত ট্যাঙ্ক, প্লাবনের পরে জমে থাকা জল, ক্লোরিন মেনে চলা সুইমিং পুল সাধারণত নিরাপদ ধরা হয়, সমুদ্রের নোনা জলও ঝুঁকিমুক্ত বলে ধরা হয়, কারণ ওই অ্যামিবা লবণজলে টেকে না, কিন্তু দুর্বল ক্লোরিনেশন বা নাক দিয়ে জোরে জল ঢোকা থাকলে ঝুঁকি থেকেই যায়।
এ বছর বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকায় কেস ছড়িয়েছে, গত বছরের মতো একটিমাত্র উৎসের ক্লাস্টার পাওয়া যায়নি, ফলে এপিডেমিওলজিকাল ট্রেসিং কঠিন, পানি উৎসের রক্ষণাবেক্ষণ, কমিউনিটি সচেতনতা, স্কুল, আঙ্গনওয়াড়ি, পঞ্চায়েত পর্যায়ে জলাধার জীবাণুমুক্তকরণে জোর দেওয়া হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের নিয়মিত রিপোর্টিংয়ের কারণে কেস শনাক্তও বাড়ছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নাকে জল ঢোকা ছাড়া হয় না, পান করলে হয় না, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে হয় না, তাই পারিবারিক সংস্পর্শের ভয় নেই, তবে সাঁতার, ডাইভ, জলকেলি, স্নানের সময়ে নাকে জল না ঢুকতে দেওয়াই সবচেয়ে বড় সংরক্ষণ, জলাশয়ে নেমে থাকলে নোজ ক্লিপ ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে, বাড়িতে ন্যাসাল রিন্স করলে সিদ্ধ, ঠান্ডা করা, বা স্টেরাইল জল ব্যবহার জরুরি।
উপসর্গ দেখা দিলে সময় নষ্ট করবেন না, তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, বমি, আলো সহ্য না হওয়া, ঘাড়ে টান, খিঁচুনি বা মানসিক বিভ্রান্তি দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যান, ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন সাম্প্রতিক মিঠে জল এক্সপোজারের কথা নথিভুক্ত আছে কি না, কারণ প্রাথমিকভাবে এটি ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস বলেই মনে হয়, ফলে সঠিক টেস্ট দেরি হতে পারে, তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে চিকিৎসার সম্ভাবনা সামান্য হলেও বাড়ে।চিকিৎসায় মিলটেফোসিন, অ্যামফোটেরিসিন বি, এবং কয়েকটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের ককটেল ব্যবহার করা হয়, নিউরো আইসিইউতে ব্রেন সুইলিং নিয়ন্ত্রণ, কোর টেম্পারেচার ম্যানেজমেন্ট, সাপোর্টিভ কেয়ার দেওয়া হয়, তবু সফলতার হার সীমিত, বিশ্বজুড়ে গুটিকয়েক বেঁচে ফেরার ঘটনা নথিভুক্ত, প্রটোকল আপডেট করে স্টকিং বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু প্রতিরোধই আসল।
যাঁরা বেড়াতে গিয়ে পুলে নামেন, রিসর্টের পুলে স্নান করেন, আগে থেকে ক্লোরিন অনুসরণ হচ্ছে কি না জেনে নিন, ফিল্ট্রেশন, ফ্রি ক্লোরিন লেভেল, মেইনটেন্যান্স লগ দেখতে চাইতে পারেন, শিশুরা, টিনএজার, তরুণদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি দেখা যায়, কারণ তারা বেশি জলে খেলাধুলো করে, নাকে জল ঢোকার সম্ভাবনা বেশি, এ সময় নোজ ক্লিপ কাজে লাগে।গ্রামে বা শহরতলিতে পুকুরে নেমে স্নান করার অভ্যাস থাকলে, জল স্থির ও কাদাযুক্ত হলে এড়িয়ে চলুন, ভারী বৃষ্টির পর পুকুর বা ট্যাঙ্কের জল আরও উষ্ণ ও দূষিত হতে পারে, সেক্ষেত্রে নাকে জল না ঢোকাতে সতর্ক থাকুন, স্থানীয় প্রশাসনের ক্লোরিনেশন ড্রাইভ সম্পর্কে খবর নিন, কূপ, ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন, স্কুল, হোস্টেল, ধর্মীয় স্থানের জলের ট্যাঙ্কও স্যানিটাইজ করানো প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর নিশ্চিত কেস ঊনসত্তর, মৃত্যু উনিশ, কিছু প্রতিবেদনে বাহাত্তর সংক্রমণের কথা বলা হয়েছে, গত বছর ছিল মাত্র ছত্রিশ, তাতে মৃত্যু হয়েছিল নয় জনের, এই বছর সেপ্টেম্বরেই একাধিক মৃত্যু হয়েছে, নাকে জল ঢোকার এক থেকে চোদ্দ দিনের মধ্যে উপসর্গ শুরু হতে পারে, তাই টাইমলাইনের খোঁজ রাখা জরুরি।আবহাওয়ার উষ্ণতা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্লাবন, এবং স্থির জলাশয়ের ব্যবহার বেড়ে যাওয়াকে বিশেষজ্ঞরা ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাব্য কারণ বলছেন, গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময়ে কেস বেশি দেখা যায়, তবে শীতেও উষ্ণ ট্যাঙ্ক বা ইনডোর অপরিষ্কৃত পুলে ঝুঁকি থাকতে পারে, জলতাপমাত্রা বেশি হলে অ্যামিবা বেড়ে ওঠে, পলিমাটির স্তরে বেশি থাকে, তাই গভীরে মাথা ডুবানো ও তলায় নাড়া চাড়া এড়ানো উচিত।
আতঙ্কের কথা শোনা গেলেও, ঝুঁকির নকশা বোঝার সহজ কায়দা হচ্ছে উৎসের ধরন বুঝে চলা, মিঠে স্থির জল ঝুঁকিপূর্ণ, নোনা জল তুলনায় নিরাপদ, ক্লোরিনেটেড পুল নিরাপদ, নলে আসা পানিও পান করার জন্য নিরাপদ, যদি নাক দিয়ে জোরে না ঢোকে, নাক দিয়ে জল টেনে পরিষ্কার করার অভ্যাস থাকলে সিদ্ধ বা স্টেরাইল জল ছাড়া কিছু ব্যবহার করবেন না।জনস্বাস্থ্য দফতরের বার্তা সরল, সতর্ক থাকুন, অযথা ভয় নয়, নাকে জল ঢুকতে দেবেন না, স্থির মিঠে জল এড়িয়ে চলুন, ক্লোরিনেশন নিশ্চিত করুন, উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে হাসপাতালে যান, স্থানীয় হেল্পলাইন, পঞ্চায়েত, পুরসভা থেকে জলের মান ও ক্লোরিনেশনের তথ্য জেনে নিন, কমিউনিটি মিটিং করে জলাশয় ব্যবহারের নিয়ম পরিষ্কার করুন।
পর্যটন কেন্দ্রগুলো, ওয়াটার পার্ক, রিসর্ট, হোমস্টে মালিকদের জন্য বার্তা পরিষ্কার, প্রতিদিন টেস্টিং, রেকর্ডে ক্লোরিন লেভেল, ফিল্টার ব্যাকওয়াশ, ইউভি বা ওজোন সাপোর্ট থাকলে ভালো, অতিথিদের নোজ ক্লিপ, শাওয়ার সাইনেজ, এবং নাকে জল না ঢোকানোর নির্দেশিকা দৃশ্যমান রাখুন, শিশুদের গভীর জলে মাথা ডুবানো বন্ধ করুন, নিয়মিত অডিট করুন, অভিযোগ পেলে দ্রুত রিমিডিয়েশন করুন।শেষ কথা, প্যামের কেস বিরল, কিন্তু মারাত্মক, তাই অতিরঞ্জিত আতঙ্ক নয়, বুদ্ধিমত্তার সতর্কতা জরুরি, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিন, নাকে জল ঢোকা আটকান, উপসর্গ মানচিত্র চেনেন, সময়মতো চিকিৎসা নিন, কমিউনিটি ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগেই ঝুঁকি কমানো সম্ভব, নিরাপদ জলই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ।