রাতদিন ওয়েবডেস্ক - গুজরাটের আহমেদাবাদে নির্মাণকাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিক। মৃতের নাম শ্যামনাথ সিং, বয়স ২৪, বাড়ি বৈষ্ণবনগর থানার ভাঙ্গাটোলা গ্রামে। তিন মাস আগে জীবিকার সন্ধানে গিয়েছিলেন আহমেদাবাদে। চলতি সপ্তাহে কাজের সময় আচমকা বিদ্যুতের তারে হাত লেগে গুরুতর আহত হন তিনি। সহকর্মীরা দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রমিকরা জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। বিদ্যুতের তার খোলা অবস্থায় পড়ে ছিল নির্মাণস্থলে। মালিকপক্ষের তরফে কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়নি।
পরিবারের কাছে খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামে। শ্যামনাথের স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা-মা—সবাই ভেঙে পড়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন তিনি। ভিনরাজ্যে কাজ করে সংসারের হাল ধরেছিলেন, তাঁর মৃত্যুতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে গোটা পরিবার। প্রতিবেশীরা জানান, শ্যামনাথ ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী ও শান্ত স্বভাবের। তাঁর অকাল মৃত্যুতে গোটা গ্রামে শোকের আবহ। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান জানান, পরিবারকে সাহায্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মৃতের স্ত্রী জানান, সহকর্মীদের কাছ থেকে ফোনে দুর্ঘটনার খবর পান। “কাজ করছিলেন, হঠাৎ বিদ্যুতের তারে হাত লাগে,”—বলেন তিনি। বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে এখন কীভাবে সংসার চলবে, সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক।” শোকের মুহূর্তে পাশে থাকার আবেদন জানান তিনি। প্রতিবেশীরা জানান, পরিবারটি বর্তমানে চরম সংকটে রয়েছে। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে।
এই ঘটনা আবারও সামনে আনল ভিনরাজ্যে বাংলার শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিস্থিতি। সম্প্রতি অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে হেনস্তা, আটকে রাখা, এমনকি বাংলাদেশে পুশব্যাকের ঘটনাও ঘটেছে। মৃত্যুর খবরও এসেছে একাধিকবার। এবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেল মালদার যুবকের। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বহু নির্মাণস্থলে। শ্রমিকদের জীবন রক্ষায় জরুরি নীতিগত পরিবর্তনের দাবি উঠেছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। মরদেহ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শ্রম দপ্তরও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। আহমেদাবাদ পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে। নির্মাণস্থলের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে।