রাতদিন ওয়েবডেস্ক - পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র চাঞ্চল্য। এই ঘটনায় অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ, তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, অভিযুক্তের সঙ্গে শাসকদল তৃণমূলের যোগ রয়েছে। তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালের ভেতরে নাকি দিনের পর দিন নারীদের অসম্মান করার জন্য আলাদা ঘর ব্যবহার করা হত। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যের নারী সুরক্ষা নিয়ে ফের প্রশ্ন তুললেন তিনি।বুধবার নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়া অডিটোরিয়ামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত গ্রামীণ সেবিকাদের সেবাদান কর্মসূচিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানেই তিনি পাঁশকুড়া কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “জাহির আব্বাস কে? তৃণমূলের বড় নেতা, ওখানকার বড় হার্মাদ।” তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনার পরও রাজ্যে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি।
শুভেন্দুর অভিযোগ, পাঁশকুড়া হাসপাতালের ভেতরে যে কক্ষটি নারীদের ওপর জঘন্য আচরণের জন্য ব্যবহার হত, তা দিনের পর দিন সক্রিয় ছিল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আপনি ভাবতে পারেন, কোন রাজ্যে আমরা বসবাস করি?” তাঁর দাবি, এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে রাজ্যে নারীরা সুরক্ষিত নন।প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শুভেন্দু বলেন, “নরেন্দ্র মোদী শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি সারা দেশের মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা। তাঁর নেতৃত্বে ভারত আজ বিশ্ব মঞ্চে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।” এরপরই তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “বাংলায় এখনও আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, কিন্তু আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, নরেন্দ্র মোদীর আশীর্বাদে এবং আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামী দিনে বাংলায় পদ্ম ফোটাবই।”
পাঁশকুড়া কাণ্ডে পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত ব্যক্তি হাসপাতালের ফেসিলিটি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ভুক্তভোগী তরুণীর অভিযোগ, একাধিকবার তাঁকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে এবং বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ দায়েরের পর কোলাঘাট থেকে অভিযুক্তকে আটক করে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ।এই ঘটনার প্রতিবাদে শুভেন্দু অধিকারী সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্য, “মেডিক্যাল কলেজ হোক বা শিক্ষাঙ্গন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেভাবে নারীদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, তার হাত থেকে বাংলার নারীদের সুরক্ষিত রাখতে সবাইকে একসঙ্গে প্রতিবাদ করতে হবে।”
রাজনৈতিক মহলে এই মন্তব্যকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির আক্রমণাত্মক অবস্থানের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, রাজ্যে নারী সুরক্ষার পরিস্থিতি ভয়াবহ, আর শাসকদল এই বিষয়ে উদাসীন।তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, অভিযুক্তের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে বিরোধীরা এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ।পাঁশকুড়া কাণ্ডে ইতিমধ্যেই স্থানীয় স্তরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছে, পুজোর আগেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নারী সুরক্ষা নিয়ে প্রচার চালানো হবে।শুভেন্দুর বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত করতে চাইছেন। তাঁর দাবি, “বাংলার মানুষ পরিবর্তন চাইছে, আর সেই পরিবর্তন আসবেই।”