রাতদিন ওয়েবডেস্ক - রানি বিড়লা গার্লস কলেজ সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট গতকাল (১৭ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ ও কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় যে শোকজ নোটিস ৩ জুলাই জারি করেছিলেন এবং ২৯ অগস্টে যে সাসপেনশন কার্যকর করেছিলেন, তার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছেন বিচারপতি বিভাস পট্টনায়েক। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, এই স্থগিতাদেশ আট সপ্তাহ বহাল থাকবে। পাশাপাশি, কাজরীর সভাপতি পদে নিয়োগের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। মামলাটি ফের শুনানি হবে ছয় সপ্তাহ পরে।
এই মামলার সূত্রপাত কলেজের অধ্যক্ষা শ্রাবন্তী ভট্টাচার্যকে শোকজ নোটিস পাঠানো থেকে। কাজরীর সেই নোটিসকে চ্যালেঞ্জ করে শ্রাবন্তী হাই কোর্টে যান। প্রথমে মামলাটি বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চে ওঠে। শুনানি শেষে অন্তর্বর্তী নির্দেশের আগে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বেঞ্চ বদলের আবেদন জানান। বিচারপতি বসু এই পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান। পরে মামলাটি বিচারপতি পট্টনায়েকের বেঞ্চে যায়, যেখানে কাজরীর নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি হয়।আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ২০১৭ সালের আইন অনুসারে কলেজের পরিচালন সমিতিতে তিনজন স্থায়ী শিক্ষক ও একজন অশিক্ষক কর্মচারী থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ রানি বিড়লা কলেজে সেই নিয়ম মানা হয়নি। শুধুমাত্র রাজ্যের মনোনীত সদস্যদের নিয়ে সমিতি সম্পূর্ণ হয় না। সভাপতির পদে নিয়োগ প্রসঙ্গে আদালত জানিয়েছে, আইনে বলা আছে ‘শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত’ কোনও ব্যক্তিকেই এই পদে বসতে হবে। কিন্তু কাজরী একজন কাউন্সিলর, এবং তিনি শিক্ষা ক্ষেত্রে যুক্ত এমন কোনও প্রমাণ আদালতে জমা পড়েনি। ফলে তাঁর নিয়োগ বৈধ কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
গত ৯ জুনের বিজ্ঞপ্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে আদালত। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ‘প্রস্তাবিত প্রেসিডেন্ট’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল এবং প্রিন্সিপালকে রিপোর্ট দিতে বলা হলেও, কোনও রিপোর্ট জমা পড়েনি। বিচারপতির মতে, সমিতি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়নি, ফলে তাদের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।এই নির্দেশে আট সপ্তাহের জন্য কাজরীর শোকজ ও সাসপেনশন সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকছে। মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে সওয়াল করেছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি ছয় সপ্তাহ পরে হবে, তখন আদালত পরবর্তী পদক্ষেপ জানাবে।প্রসঙ্গত, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আভেরি গুহকে পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছিল। সেই বছরের অগস্টে শ্রাবন্তী ভট্টাচার্য কলেজের অধ্যক্ষা হন। চলতি বছরের জুনে কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সভাপতি পদে মনোনীত করা হয়। ১১ জুন অধ্যক্ষা পরিচালন সমিতির নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে, অভিযোগ অনুযায়ী, কাজরী নির্বাচনের বদলে মনোনয়নের ভিত্তিতে সমিতি গঠন করতে বলেন। এখান থেকেই অধ্যক্ষা ও সভাপতির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, যা culminate হয় ৩ জুলাইয়ের শোকজ নোটিসে।