রাতদিন ওয়েবডেস্ক - পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে কৌশলগত ও পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে পাকিস্তান। বুধবার রিয়াদের আল–ইয়ামামা প্রাসাদে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকের পর এই চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ভবিষ্যতে পাকিস্তান বা সৌদি আরবের ওপর কোনও আগ্রাসী হামলা হলে সেটিকে উভয় দেশের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং যৌথভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই চুক্তি দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করবে, নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে। সৌদি আরবের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, প্রায় আট দশকের ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও ইসলামি সংহতির ভিত্তিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ভারত এই চুক্তি সম্পর্কে অবগত এবং এর ফলে ভারতের জাতীয় স্বার্থ বা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে কোনও নতুন প্রভাব পড়বে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। ভারত–সৌদি সম্পর্ক বর্তমানে ঘনিষ্ঠ পর্যায়ে রয়েছে, তবে পাকিস্তানের সঙ্গে রিয়াদের এই নতুন প্রতিরক্ষা সমঝোতা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের মত। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সীমান্তে সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এই চুক্তি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান তার কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে চাইছে, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে। অন্যদিকে, সৌদি আরবও মধ্যপ্রাচ্যে তার নিরাপত্তা ও প্রভাব বিস্তারের কৌশলকে পুনর্গঠন করছে। এই চুক্তি শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। ভবিষ্যতে যৌথ সামরিক মহড়া, অস্ত্র উন্নয়ন এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান–প্রদানের মতো বিষয়গুলো এই চুক্তির আওতায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চুক্তির পরপরই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, এই সমঝোতা দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা ও কৌশলগত সমন্বয়কে আরও দৃঢ় করবে। তিনি জানান, আগামী মাসেই রিয়াদে একটি যৌথ সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে দুই দেশের সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।এদিকে, কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে যে এই চুক্তি চীন ও আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদি–পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা যদি আরও বাড়ে, তাহলে চীন–পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের সঙ্গে সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, আমেরিকা এই অঞ্চলে তার প্রভাব ধরে রাখতে চাইলে নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হতে পারে।