রাতদিন ওয়েবডেস্ক - কলকাতার অন্যতম আকর্ষণীয় দুর্গাপুজো মণ্ডপ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে এ বছর থিম ‘অপারেশন সিঁদুর’। প্রতিবছরের মতো এবারও বিপুল দর্শনার্থীর ভিড় আশা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মণ্ডপের নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে একের পর এক চিঠি পাঠানো হয়েছে পুজো কমিটিকে। মোট চারটি চিঠি পাঠানো হয়েছে, যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপানউতোর। পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা ও বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাঁদের হয়রানি করছে।
পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা শুক্রবার শহরের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ পরিদর্শনে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে বারবার চিঠি পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দুর্গাপুজোয় আমাদের একটাই লক্ষ্য থাকে, সাধারণ মানুষের সুরক্ষা। সেই সুরক্ষা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, সেটাই কলকাতা পুলিশের মূল উদ্দেশ্য।” তিনি আরও জানান, দর্শনার্থীদের ভিড় কীভাবে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সেই নির্দেশনাই চিঠিতে দেওয়া হয়েছে।
মুচিপাড়া থানার পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠিতে বেশ কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। যেমন, মণ্ডপে ঢোকা ও বেরনোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা, বেরনোর গেট প্রবেশপথের চেয়ে চওড়া রাখা, মণ্ডপের ভিতরে বা আশেপাশে কোনও লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো না করা, পার্কের পূর্ব প্রান্তে বা গেটের কাছে কোনও হকার বা স্টল না বসানো। এছাড়া অন্তত ৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া মোড় থেকে মণ্ডপ পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞাপনী গেট বা কাঠামো না রাখা, এবং পিক আওয়ারে ২৫০ জন ও অফ আওয়ারে ১০০ জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের নির্দেশ রয়েছে।
সজল ঘোষের অভিযোগ, “এই নিয়ে আমরা চতুর্থ পুলিশের চিঠি পেলাম। ওসির কথা আইন নয়, আমরা আইনের কথা মানব। কলকাতা শহরে যদি একটা দুর্গাপুজোর জায়গা ঢোকা-বেরোনোসহ রাস্তাঘাট আমার থেকে কেউ বেশি বড় দেখাতে পারে, তাহলে আমি পুজোর সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখব না।” তিনি আরও বলেন, “হোর্ডিং-বিজ্ঞাপন লাগানো যাবে না, নাগরদোলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ, স্টলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ—পুলিশ নিজেকে বাবার জমিদারি ভাবছে মনে হয়।”এই অভিযোগের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, “উনি কী বলছেন, তার উপর আমার মন্তব্য করা উচিত নয়। তবে কলকাতা পুলিশ সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, চিঠির বিষয়বস্তু দেখলেই বোঝা যাবে, সবই জননিরাপত্তার স্বার্থে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে ভিড়ের চাপে ‘স্ট্যাম্পিড’-এর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এ বছর বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। কমিশনারের মতে, পুজো কমিটি ও পুলিশ—দুই পক্ষের লক্ষ্যই একই, নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন উৎসব।সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় আকর্ষণ। থিম, সজ্জা ও আয়োজনের জন্য প্রতি বছরই এখানে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ থিমকে ঘিরে এ বছরও কৌতূহল তুঙ্গে। তবে ভিড় সামলাতে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও আয়োজকদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি বলে মনে করছেন অনেকে।
চিঠির ভাষা ও নির্দেশনার ধরন প্রশাসনিক সতর্কতার ইঙ্গিত বহন করছে স্পষ্টভাবে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতীত অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে গভীরভাবে। পুলিশের চিঠিতে প্রতিটি নির্দেশ বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পুজো কমিটির অভিযোগ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। নির্দেশনার সংখ্যা ও প্রকৃতি প্রশাসনিক উদ্বেগের মাত্রা প্রকাশ করছে নির্ভরযোগ্যভাবে। চিঠির পুনরাবৃত্তি প্রশাসনিক চাপের ইঙ্গিত হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন বিশ্লেষকরা। নিরাপত্তা বনাম স্বাধীনতা বিতর্কে প্রশাসনিক ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি বলে মত।
সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন পরিকল্পিত মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার উদাহরণ। প্রবেশ ও নির্গমন পথের পরিকল্পনা জনস্রোতের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো নিষিদ্ধকরণ মনোসংযোগ ও নিরাপত্তা রক্ষায় সহায়ক সিদ্ধান্ত। বিজ্ঞাপন গেট না রাখার নির্দেশ ভিজ্যুয়াল প্রতিবন্ধকতা কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ। স্টল ও হকার নিয়ন্ত্রণ জনসাধারণের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে প্রশাসনিক প্রয়াস। প্রযুক্তি ও মানবসম্পদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সজল ঘোষের বক্তব্য রাজনৈতিক প্রতিরোধের ভাষ্য হিসেবে বিশ্লেষণ করছেন অনেকে। আইনের ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক প্রশাসনিক কর্তৃত্বের সীমা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমত বিভাজিত, কেউ সমর্থন কেউ সমালোচনা করছেন। নাগরদোলা ও হোর্ডিং নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পুজো কমিটির স্বাধীনতা বনাম প্রশাসনিক নির্দেশনার দ্বন্দ্ব স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। জননিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ভারসাম্য রক্ষা প্রশাসনের বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক বিতর্কে পুজোর মূল উদ্দেশ্য যেন আড়ালে না পড়ে যায়, মত বিশ্লেষকদের।
কমিশনারের বক্তব্যে জননিরাপত্তার অগ্রাধিকার স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রশাসনিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন সংযতভাবে। চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে মন্তব্য না করে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। সজল ঘোষের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া না দিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক এড়ানোর কৌশল। জননিরাপত্তার স্বার্থে নির্দেশনার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন তথ্যভিত্তিকভাবে। সাংবাদিকদের সামনে কমিশনারের সংযত ভাষা প্রশাসনিক পরিপক্বতার পরিচয়। বক্তব্যে বারবার নিরাপত্তা ও সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে সুস্পষ্টভাবে।
গত বছরের স্ট্যাম্পিড পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রশাসনিক পর্যালোচনার ফলাফল হিসেবে দেখা যায়। পুলিশ ও পুজো কমিটির সমন্বয় উৎসবের সুষ্ঠু পরিচালনার পূর্বশর্ত। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে আগেভাগেই। দর্শনার্থীদের জন্য নির্বিঘ্ন অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ। থিম ও সজ্জার আকর্ষণ বজায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষা জরুরি। ভবিষ্যতের উৎসব পরিকল্পনায় এই অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ দিশা দেখাবে বলেই মত।