রাতদিন ওয়েবডেস্ক - মাওবাদী শিবির থেকে আলোচনার ইঙ্গিত এল, গত ৯ মাসে ২১০ জন সদস্য খুইয়ে সরকারের কাছে শান্তি প্রস্তাব পাঠিয়েছে সিপিআই, মাওবাদী। কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেখানে আত্মসমর্পণ এবং অস্ত্রত্যাগে প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবে এক মাসের অস্থায়ী সংঘর্ষবিরতির দাবি তোলা হয়েছে। লক্ষ্য, সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার পথ খুলে দেওয়া, যাতে সমাধানের দিকে যাওয়া যায়। দলটির তরফে বলা হয়েছে, যদি সরকার চায়, তারা কাল থেকেই ভিডিও কলে আলোচনায় বসতে রাজি। এই সুর নরম হওয়ার পেছনে অব্যাহত অভিযানের চাপই বড় কারণ বলে নিরাপত্তা মহলের মূল্যায়ন। ঘটনাগুলি আজ, ১৭ সেপ্টেম্বরের রিপোর্টে উঠে এসেছে, প্রকাশিত বিবরণগুলো দিনদুয়েক ধরে ফাঁস হয়েছে। মূল সুত্রগুলো বলছে, এই মুহূর্তে পরিসংখ্যান এবং বার্তার সত্যতা খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
বিবৃতির দাবিতে আরও আছে, ২০২৪ সাল থেকে লাগাতার তল্লাশি, ধাওয়া, এনকাউন্টারে দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত। মাওবাদী নেতা অভয় নামে স্বাক্ষরিত চিঠির তারিখ ১৫ আগস্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে জনস্বার্থে রাজনীতিক এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। এক মাসের সময় চাওয়ার পাশাপাশি জেলবন্দি শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থাও চাওয়া হয়েছে। সংগঠন জানিয়েছে, এই সময়ে যেন কোনও অভিযান না হয়। শান্তির ইচ্ছা থাকলে সরকারই আলোচনার তারিখ জানিয়ে দিক। ভিডিও কল বা সরাসরি, যেভাবেই হোক, প্রাথমিক স্তরের সংলাপে বসতে প্রস্তুত তারা। এখন প্রশ্ন, এই চিঠি সত্যিই মাওবাদীদের কিনা, সেটাই প্রথম যাচাই।
ছত্তিশগড় প্রশাসনের দাবি, চিঠির সত্যতা পরীক্ষা চলছে। যাচাই সম্পন্ন হলে কেন্দ্রের কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানো হবে। সরকারিভাবে কেউ আলোচনা নিশ্চিত করেনি, তবে সূত্র বলছে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো একযোগে ডকুমেন্ট ফরেনসিক, উত্স ট্রেইস, ইন্টেল ম্যাচিং করছে। এর আগে ভুয়ো চিঠির নজিরও আছে, তাই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নয়। শর্ত একটাই, শান্তি প্রক্রিয়ার নামে অভিযানে কোনও ঢিলেমি দেওয়া হবে না। আইন শৃঙ্খলার মানদণ্ড অপরিবর্তিত থাকবে। এই প্রাথমিক অবস্থান থেকে পরবর্তী নীতি নির্ধারণ হবে। রাজনৈতিক স্তরে চূড়ান্ত সংকেতের অপেক্ষা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার বলেছেন, ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্য নির্ধারিত। ছত্তিশগড়ে সরকার বদলের পর অভিযান স্পষ্টতই ত্বরান্বিত হয়েছে। ২০২৪ সালে শুধু বস্তার অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর অপারেশনে মৃত্যু হয়েছে ২৮৭ জন মাওবাদীর। গ্রেপ্তার হয়েছে হাজারের বেশি, আত্মসমর্পণ করেছে ৮৩৭ জন। এই ধারার পর ২০২৫ সালে অভিযান আরও আক্রমণাত্মক। গত ৯ মাসে ২১০ জন মাওবাদী এনকাউন্টারে মারা গেছেন, যার মধ্যে অন্তত ১৩ জন শীর্ষ নেতা। যাদের মাথার দাম ২০ লক্ষ থেকে এক কোটি টাকার মধ্যে ছিল। এই পরিসংখ্যানই শান্তি ডাকে যাওয়ার বাস্তব চাপটা বুঝিয়ে দেয়।
মাওবাদী শিবিরে ভাঙনের আভাস মিলছে, একাংশ অস্ত্র রাখার পথে হাঁটতে চাইছে। বহু জেলায় ক্যাডার লাইনের ধারাবাহিক ক্ষয়, নেতৃত্বের শূন্যতা, সরবরাহ লাইনের ধাক্কা, সব মিলিয়ে সংগঠনের রণকৌশল দুর্বল হয়েছে। তাদের ঘোষণায় জনস্বার্থের কথা জোরে বলা হলেও, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে সেটি কৌশলগত টোন শিফট। উদ্দেশ্য, সময় নেওয়া, পুনর্গঠন, চাপে স্বস্তি, যোগাযোগের দরজা খোলা। তবে আলোচনার জানালা খোলা মানে অপারেশন থামানো নয়, এই নীতি কেন্দ্র বহুবার জানিয়েছে। তাই সংঘর্ষবিরতির শর্তে সরকার কতটা সায় দেয়, সেটাই চোখে চোখে রাখা হচ্ছে। ময়দানে সেই অনুযায়ী কৌশল ঠিক করবে বাহিনী। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক স্তরে।
এদিকে রাজ্যের দাবি, কোনও যুদ্ধবিরতি হলেও, স্থানীয় থানার স্তরে রুটিন ডমিনেশন প্যাট্রোল চলবে। বহু অঞ্চলে পুলিশের সঙ্গে সিআরপিএফ, বিএসএফ, কবে, কম্বিং অপারেশন চালাচ্ছে। সাপ্লাই রুট, আইইডি করিডর, অ্যাম্বুশ জোন, এসব চিহ্নিত করে একের পর এক ক্লিয়ার করা হচ্ছে। লং রেঞ্জ প্যাট্রোলের ঘনত্ব বেড়েছে। রাত্রিকালীন নজরদারি, ড্রোন ম্যাপিং, সিগনাল ইন্টেল, সব বাড়ানো হয়েছে। ফলে ক্যাডারদের মুভমেন্ট কেটে গেছে। এই চাপেই টার্গেটেড এনকাউন্টারের সংখ্যা বেড়েছে। প্রভাব পড়েছে রিক্রুটমেন্টেও, এটাই নিরাপত্তা শিবিরের হিসাব।
সংগঠনের বিবৃতিতে আলোচনার মেজে কাদের বসানো হবে, সে বিষয়ে খোলা রেখেছে তারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা তাঁর প্রতিনিধিদল, যে কারও সঙ্গে কথা বলবে বলেই জানিয়েছে। কারাগারে থাকা শীর্ষ নেতা, থিঙ্কট্যাঙ্কদেরও ব্রিফ করতে চায়। এই এক মাসে মাঠপর্যায়ের সব ইউনিটে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছে। তারা আবারও বলেছে, ভিডিও কনফারেন্সিংয়েও প্রথম রাউন্ড সম্ভব। তবে যে কোনও সময়, যে কোনও স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চেয়েছে। আলোচনার ঠিকানা, সময়, এজেন্ডা, ফরম্যাট, এগুলো সরকারের কোর্টে বল।
রাজনৈতিক অঙ্কটাও স্পষ্ট, যে পক্ষই ক্ষমতায় থাকুক, মাওবাদ মোকাবিলায় কড়া অবস্থানের জনসমর্থন আছে। একই সঙ্গে, সঠিক মুহূর্তে আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া বাড়িয়ে মানবিক জানালা খোলা, সেটাও জনপ্রশাসনের অংশ। এর আগে নানা রাজ্যে স্যুরেন্ডার পলিসি, পুনর্বাসন, স্কিলিং, মেনস্ট্রিমিং, এগুলোর মিশেল কাজ করেছে। বড় ক্যাডাররা আত্মসমর্পণ করলে তথ্য প্রবাহ খুলে যায়। লজিস্টিক চেইন সম্পর্কে নতুন ক্লু পাওয়া যায়। ফলে ছোট ইউনিটগুলিও বিচ্ছিন্ন হয়। তাই সরকার সাধারণত সিলেক্টিভ সিগন্যালিং করে।
বিভিন্ন জেলায় প্রশাসন কাগজপত্র যাচাইয়ের পাশাপাশি গ্রাউন্ড ইন্টেল তুলছে। কোনও নতুন ক্যাম্প উঠছে কি না, পুরনোগুলো ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কি না, সেগুলো মিলিয়ে দেখছে। সিভিল সোসাইটি, স্থানীয় পঞ্চায়েত, জঙ্গল কমিটি, এসব সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। একই সঙ্গে, সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম, মেসেঞ্জার চ্যানেল, টেলিগ্রাম গ্রুপ, সব জায়গায় মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে। ভুয়ো বিবৃতি ঠেকাতে সাইবার সেলেরও কড়া নজর। যাচাই ছাড়া কোনও পদক্ষেপে না যাওয়াই নীতি। তাই আনুষ্ঠানিকতা না মিটলে, উচ্চপর্যায়ের মিটিংয়ের সম্ভাবনা কম। পরিস্থিতি গতিশীল, সিদ্ধান্ত ধাপে ধাপে।
মাঠে বাস্তবতা, অপারেশন থামেনি, থামবেও না, তবে টোন অ্যাডজাস্ট হতে পারে। ধাপে ধাপে কনট্যাক্ট স্থাপন, সেফ করিডর চিহ্নিত, মেসেজিং সিঙ্ক, এই সবই দেখা হবে। একসঙ্গে, আত্মসমর্পণ লজিস্টিক, ডি, আর্মিং, সেফ হোল্ডিং এরিয়া, আইনি প্রক্রিয়া, এগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়। আগেও দেখা গেছে, বড় ঢেউয়ের আগে ছোট ছোট গ্রুপ এসে আত্মসমর্পণ শুরু করে। তাতেই বাকি ক্যাডারদের মনস্তত্ত্ব নরম হয়। তারপরই সংখ্যায় বড় স্রোত নামে। এখন সেই প্রি, ওয়েভের ইঙ্গিত কি, সেটাই নজরে। এটাই আজকের আপডেট।
সরকারি শিবির মনে করিয়ে দিচ্ছে, অতীতের অভিজ্ঞতা বলছে, আলোচনার মাঝে হামলার নজিরও আছে। তাই কাগজে কলমে যুদ্ধবিরতি এলেও, জমিতে সতর্কতার ঘাটতি চলবে না। প্যাট্রোলিং রুট বদল, ভেহিকল কনভয় ড্রিল, আইইডি প্রটোকল, সব বজায় থাকবে। ইউনিট কমান্ডারদের হাতে ফ্লেক্সিবিলিটি রাখা হবে। রেড জোনের গ্রামে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজও চলবে। প্রশাসন স্থানীয় স্তরে রিলিফ এবং স্বাস্থ্য শিবির চালু রাখবে। যাতে জনসমর্থন সরকারের পাশে থাকে। যুদ্ধ, শান্তি, উভয় পর্বেই জনগণের নিরাপত্তাই অগ্রাধিকার।
অন্যদিকে, এই ইশারা সংগঠনের ভেতরকার রণকৌশল বদলেরও সঙ্কেত। শীর্ষ নেতৃত্ব হারালে, ফিল্ড কমান্ডাররা অনেক সময় স্থানীয় বাস্তবতায় বেশি ঝুঁকে পড়েন। তখন দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের বদলে স্বল্পমেয়াদি টিকে থাকা প্রধান লক্ষ্য হয়। এই মুহূর্তে মাটিতে সেটাই দেখা যাচ্ছে। সাপ্লাই লাইন কেটে দেওয়া, ক্যাশ, কমিউনিকেশন, সব জায়গায় চাপ। ফলে রিক্রুটমেন্ট থেমে গেছে। নতুনদের টানার মতো ন্যারেটিভও দুর্বল। এই শূন্যতায় গ্রুপগুলো আলোচনার ডাকে হাঁটে।
তবে কেন্দ্রীয় বার্তার একাংশ বলছে, আলোচনা মানেই আত্মসমর্পণ নয়। বরং সীমিত লক্ষ্য অর্জনই প্রথম উদ্দেশ্য। যেমন, ধাওয়া কমানো, গ্রেফতারের ঝুঁকি ঠেকানো, আহতদের সরে যাওয়ার সুযোগ নেওয়া। তারপর মাঠে শক্তি পুনর্বিন্যাস। এই নকশা আগেও দেখা গেছে। তাই নিরাপত্তা বাহিনী চাইছে, যে কোনও আলোচনা হবে শর্তসাপেক্ষে। অস্ত্র রাখা, অবস্থান জানানো, কমান্ড চেইন প্রকাশ, এই ধাপগুলো স্পষ্ট করতে হবে। না হলে আলোচনায় গতি নয়, কেবল কুয়াশা।
এখন ফোকাস থাকবে, কেন্দ্র কী সিগন্যাল দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়া রাজ্য স্তরে বড় কিছু হবে না। প্রাথমিকভাবে, হাই, লেভেল টাস্কফোর্সই আলোচনার ফ্রেম সাজায়। আইবি, এনআইএ, সিআরপিএফ, রাজ্য পুলিশ, আইন মন্ত্রক, সবাই মিলে ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে। যেখানে নিরাপত্তা, আইনি পথ, পুনর্বাসন, সব একসঙ্গে রাখা হয়। তারই মধ্যে দৌড়োয় মানবিক প্রোটোকল। যাতে আত্মসমর্পণকারী, পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। বার্তার অপেক্ষা আজও জারি।
সামাজিক পরিমণ্ডলেও প্রতিক্রিয়া এসেছে, শান্তি হোক, তবে শর্ত মেনে, আইনের মর্যাদা রেখে। জঙ্গলে থাকা শিশু, নারী, বয়স্কদের দ্রুত সেফ জোনে নিয়ে এসে চিকিৎসা দেওয়ার কথা উঠেছে। অনেকেই বলছেন, বন্দুকের নীরবতা যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি ভয়মুক্ত জনজীবন। অভিযোগ, তাড়াহুড়ো করে ট্রফি তৈরি নয়, স্থায়ী সমাধান চাই। শিক্ষার সুযোগ, সড়ক, স্বাস্থ্য, কাজ, এই বেসিক গ্যারান্টি ছাড়া শান্তি স্থায়ী হয় না। তাই উন্নয়নের গতি ধরে রাখা দরকার। একই সঙ্গে, ন্যায়বিচারের বার্তাও স্পষ্ট হওয়া দরকার। সবশেষে, ছবিটা এমন, মাঠে অভিযান জারি, টেবিলে প্রস্তাবও জারি। দুই দিকেই নজর রেখে চলছে প্রশাসন। যাচাই না হলে আলোচনার দরজা খুলবে না। আর খোলার পরও, শর্ত ছাড়া এগোনো হবে না। মাওবাদী শিবিরে ভাঙন কতটা গভীর, কয়েক দিনের মধ্যেই বোঝা যাবে। ছোট ছোট আত্মসমর্পণে ঢেউ উঠলে, বড় দলে নামবে। তাতেই এই অধ্যায়ের মোড় ঘুরবে। আপাতত, সতর্ক আশাবাদই বাস্তবতার নাম।

