রাতদিন ওয়েবডেস্ক - হায়দরাবাদে দুর্নীতি দমন শাখার (ACB) আকস্মিক অভিযানে বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার আম্বেদকর এরুগুর বিপুল পরিমাণ অঘোষিত সম্পত্তির হদিস মিলেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই তল্লাশি অভিযানে তাঁর বাড়ি এবং পরিবারের সঙ্গে যুক্ত মোট ১০টি ঠিকানায় চিরুনি তল্লাশি চালানো হয়। অভিযোগ, সরকারি আয়ের তুলনায় তাঁর সম্পত্তি অস্বাভাবিকভাবে বেশি এবং অধিকাংশই বেআইনি উপায়ে অর্জিত। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এরুগুর নামে ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শেরলিংগমপল্লিতে একটি ফ্ল্যাট, গাচিবৌলিতে একটি পাঁচতলা ভবন এবং ১০ একর জমির ওপর ‘অ্যামথার কেমিক্যালস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া হায়দরাবাদে ছয়টি প্লট, একটি কৃষিজমি, দুটি গাড়ি, বিপুল সোনার গয়না এবং ব্যাংক আমানতের নথি উদ্ধার হয়েছে।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য, এরুগুর এক সহযোগীর বাড়ি থেকে নগদ ২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে ACB। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সরকারি পদ ব্যবহার করে তিনি এই বিপুল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। বাজেয়াপ্ত সম্পদের বাজারমূল্য সরকারি অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।এরুগুকে গ্রেফতার করে আদালতে তোলা হয়েছে এবং আদালত তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে। ACB সূত্রে খবর, আরও সম্পত্তির খোঁজে তদন্ত চলছে। পাশাপাশি দেখা হচ্ছে, কার কাছ থেকে এবং কীভাবে এই অর্থ নেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীরা সম্ভাব্য ঘুষ, কমিশন এবং অবৈধ লেনদেনের নথি খতিয়ে দেখছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতা আবারও সামনে এল। পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাটে সম্প্রতি এক শিক্ষকের শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার সঙ্গে একটি বেটিং চক্র জড়িত থাকতে পারে।অসমেও মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার বিশেষ ভিজিল্যান্স সেলের অভিযানে রাজ্যের এক তরুণী ACS অফিসারের বাড়ি থেকে প্রায় ৯২ লক্ষ টাকা নগদ এবং ২ কোটি টাকার গয়না উদ্ধার হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানান, গত ছয় মাস ধরে ওই অফিসারের উপর নজর রাখা হচ্ছিল এবং তাঁর বিরুদ্ধে জমি বেচাকেনা সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ ছিল।
অভিযোগ অনুযায়ী, বরপেটা জেলায় সার্কল অফিসার হিসেবে কাজ করার সময় নূপুর বোরার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারীদের নামে সরকারি ও সাতরা জমির রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই সোমবার তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।দুর্নীতি দমন শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধরনের অভিযান কেবল নগদ বা সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য নয়, বরং দুর্নীতির শিকড়ে পৌঁছনোর জন্যও জরুরি। অভিযুক্তদের আর্থিক লেনদেন, সম্পত্তির উৎস এবং নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করাই মূল লক্ষ্য।
তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন, বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির প্রকৃত মূল্য সরকারি অনুমানের তুলনায় বহুগুণ বেশি হতে পারে। কারণ, অনেক সম্পত্তি বাজারদরের তুলনায় কম দামে রেজিস্ট্রি করা হয়, যা পরে প্রকৃত মূল্য নির্ধারণে ধরা পড়ে।এই ধরনের অভিযানে প্রায়ই দেখা যায়, সরকারি পদে থেকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্নীতি দমন শাখার এই ধারাবাহিক অভিযান প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

