Type Here to Get Search Results !

অভিযুক্ত শিক্ষক গ্রেফতার, ছাত্রীর খণ্ডিত দেহ উদ্ধারে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকা

রাতদিন ওয়েবডেস্ক   -  বীরভূমের রামপুরহাটে সপ্তম শ্রেণির এক আদিবাসী স্কুলছাত্রীকে অপহরণ, ধর্ষণ ও নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তারই স্কুলের ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষক মনোজ কুমার পাল। প্রায় ২০ দিন নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার রাতে কালিডাঙ্গা গ্রামের কাছে একটি সেচখাল থেকে ছাত্রীর পচাগলা ও খণ্ড-বিখণ্ড দেহের উপরের অংশ উদ্ধার হয়। কোমরের নিচের অংশ এখনও নিখোঁজ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৮ আগস্ট টিউশন পড়তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি ওই ছাত্রী। পরিবারের পক্ষ থেকে রামপুরহাট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। পরে সন্দেহের তীর যায় শিক্ষক মনোজের দিকে। পরিবারের সদস্যরা স্কুলে গিয়ে তাকে মারধর করলে পুলিশ এসে আটক করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনোজ স্বীকার করেন, ছাত্রীকে প্রথমে ঝাড়খণ্ডের মলুটি নিয়ে যান, বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানোর পর রামপুরহাটে এনে খুন করেন। দেহ তিন টুকরো করে সেচখালে ফেলে দেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে দেহের দুই অংশ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, কোমরের নিচের অংশ এখনও উদ্ধার হয়নি এবং তারা আশেপাশের এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যে দেহ খণ্ডিত করা হয়েছে। মৃতার দিদা নীলিমা বেসরা অভিযোগ করেছেন, “মনোজ কুমার পাল আমার নাতনিকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে খুন করেছে। আমরা তার ফাঁসি চাই।” ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা রামপুরহাট থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। পুলিশের আশ্বাসে বিক্ষোভ প্রত্যাহার হয়।

রামপুরহাট থানার আইসি সুকমল ঘোষ জানিয়েছেন, অভিযুক্ত যাতে জামিন না পায়, তার জন্য হাইকোর্ট থেকে আইনজীবী আনা হয়েছে। “আমরাও চাই ওর ফাঁসি হোক,” বলেন তিনি। বুধবার অভিযুক্তকে রামপুরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ৯ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।এই ঘটনায় এলাকায় শোক ও ক্ষোভের ছায়া নেমে এসেছে। বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করে অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাদের হাতে ছিল “আমরা বিচার চাই,” “স্কুলে নিরাপত্তা চাই,” “শিক্ষকের মুখোশ খুলে দাও” ইত্যাদি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় কলেজের কয়েকজন ছাত্রনেতা, যারা প্রশাসনের কাছে লিখিত দাবিপত্রও জমা দিয়েছেন।শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন। প্রশাসনের তরফে স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সমাজকর্মীরা এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এবং আদিবাসী মেয়েদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার অধিকার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এই ঘটনা শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য ও অবহেলার প্রতিফলন। বিভিন্ন সংগঠন যৌথভাবে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে, যেখানে আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়েছেন।রাজ্য সরকারের তরফে এই ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে এবং বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি মৃত ছাত্রীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও মনো-পরামর্শ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রশাসনের তরফে এলাকায় শান্তি বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। #JusticeForRampurhatGirl হ্যাশট্যাগটি ট্রেন্ড করছে এবং হাজার হাজার মানুষ এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পোস্ট করছেন। অনেকে অনলাইন পিটিশন শুরু করেছেন অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে।মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা মনে করছেন, অভিযুক্তের রাজনৈতিক সংযোগের কারণে তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে। সংগঠনগুলো সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে, যেন তদন্তে স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো রকম পক্ষপাত না থাকে। তারা এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad