রাতদিন ওয়েবডেস্ক - আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুন মামলার এক বছর পেরিয়ে গেলেও, ঘটনাস্থল সরেজমিনে দেখতে চেয়ে ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে সেই আর্জির শুনানিতে আদালত সরাসরি প্রশ্ন তোলে—“আপনারা তো তদন্তকারী সংস্থা নন, তাহলে কেন ওই হাসপাতালের ক্রাইম সিনে যেতে চাইছেন?” এই মন্তব্যে মামলার নতুন মোড় তৈরি হয়েছে।
পরিবারের দাবি, ‘প্লেস অফ অকারেন্স’ বা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে। প্রথমে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে এবং পরে শিয়ালদহ আদালতে আবেদন করেছিলেন। শিয়ালদহ আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর ফের হাইকোর্টে আসেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, সিবিআই ও কলকাতা পুলিশের তদন্তে আস্থা নেই, তাই নিজেরা গিয়ে দেখতে চান।শিয়ালদহ আদালতে শুনানির সময় সিবিআই জানিয়েছিল, পরিবারের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে তাদের আপত্তি নেই। বিচারক অরিজিৎ মণ্ডল তখন বিস্ময় প্রকাশ করে প্রশ্ন তোলেন—তদন্তের দায়িত্বে থাকা সংস্থা কেন ‘নো অবজেকশন’ দিল? তাঁর মন্তব্য, এতে মনে হচ্ছে পরিবার সমান্তরাল তদন্ত করতে চাইছে। সেক্ষেত্রে সিবিআইয়ের এই অবস্থান তদন্তের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলে।
বিচারকের পর্যবেক্ষণ ছিল, যদি সিবিআই মনে করে তাদের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা সঠিকভাবে কাজ করেননি, তাহলে এতদিন বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের তদন্ত কীভাবে চলল? আদালত স্পষ্ট করে জানায়, আইনে এমন কোনও বিধান নেই যা ভুক্তভোগীর পরিবারকে স্বাধীনভাবে ক্রাইম সিন পরিদর্শনের অনুমতি দেয়।উল্লেখযোগ্য, এই মামলায় প্রথম থেকেই সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, তদন্তে গাফিলতি হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই নিজেরা গিয়ে পরিস্থিতি দেখতে চেয়েছিলেন। তবে আদালতের প্রশ্নে সেই যুক্তি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে।
হাইকোর্টের বেঞ্চে সিবিআইয়ের ‘নো অবজেকশন’ নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়। বিচারপতি বসাক বলেন, “তদন্তকারী সংস্থা যদি মনে করে তাদের কাজ ঠিক, তাহলে এই অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজন কী?” এই মন্তব্যে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।নিম্ন আদালতের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, আইনে ভুক্তভোগীর পরিবারের এমন পরিদর্শনের সুযোগ নেই। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই হাইকোর্টে আসেন তাঁরা। এখন হাইকোর্টের প্রশ্নে তাঁদের অবস্থান আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
পরিবারের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে তদন্তের ফাঁকফোকর বোঝা যাবে। কিন্তু আদালত বলছে, তদন্তের দায়িত্ব একমাত্র সংস্থার, ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে দেখা আইনি কাঠামোর বাইরে।এই মামলার পরবর্তী শুনানি চলতি সপ্তাহেই হওয়ার কথা। তখন আদালত চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে। একইসঙ্গে, সিবিআইয়ের তদন্তের মান ও পদ্ধতি নিয়েও পর্যবেক্ষণ আসতে পারে।

