Type Here to Get Search Results !

কেরালায় দম্পতির অকথ্য নির্যাতন, দুই পুরুষের উপর পাশবিক হামলা

রাতদিন ওয়েবডেস্ক   -  কেরালার আলাপ্পুঝা জেলার কোইপুরমের কাছে চরালকুন্নুর এলাকায় এক দম্পতির বিরুদ্ধে দুই পুরুষকে ডেকে এনে অকথ্য যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত জয়েশ ও রেশমি ওনাম উৎসব উদযাপনের নামে প্রথমে নীলামপেরুরের ১৯ বছরের এক কিশোরকে এবং পরে জয়েশের প্রাক্তন সহকর্মীকে বাড়িতে ডেকে নেয়। অভিযোগ, দুই ক্ষেত্রেই শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা ছিল চরম, যা শুনে শিউরে উঠছে স্থানীয়রা। ঘটনায় ইতিমধ্যেই ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তকারীরা বলছেন, নির্যাতনের ধরন ও প্রস্তুতি দেখে মনে হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে ফাঁদ পাতা হয়েছিল।

প্রথম ঘটনায়, কিশোরকে রেশমির সঙ্গে জোর করে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হয়। সেই সময় জয়েশ মোবাইলে পুরো দৃশ্য রেকর্ড করে। অভিযোগ, কিশোরের হাত-পা বেঁধে লোহার রড ও সাইকেলের চেন দিয়ে মারধর করা হয়। ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখানো হয় এবং যৌনাঙ্গে গুঁড়ো মরিচ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তার কাছ থেকে ১৯ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে অটোরিকশা স্ট্যান্ডে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ বলছে, শারীরিক আঘাতের পাশাপাশি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে ওই কিশোর। চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।দ্বিতীয় ঘটনায়, জয়েশের প্রাক্তন সহকর্মীকে একইভাবে বাড়িতে ডেকে আনা হয়। অভিযোগ, তাঁকেও মারধর করা হয় এবং যৌনাঙ্গসহ সারা শরীরের ২৩টি জায়গায় স্টেপলার দিয়ে স্টেপল করা হয়। এরপর তার কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আঘাতের ধরন গুরুতর এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন হবে। এই ঘটনায়ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন, শারীরিক আঘাত ও ডাকাতির মামলা রুজু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, দুই ক্ষেত্রেই নির্যাতনের ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছিল। তদন্তকারীরা সেই ফুটেজ উদ্ধার করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই ভিডিও ব্ল্যাকমেইল বা অন্য কোনও অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা ছিল। এছাড়া, ঘটনার নেপথ্যে কালো জাদু বা তন্ত্রসাধনার বিষয় জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রমাণ ছাড়া কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হবে না।স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জয়েশ ও রেশমি দম্পতি এলাকায় খুব একটা মেলামেশা করতেন না। ওনাম উৎসবের অজুহাতে হঠাৎ করে অতিথি ডাকার বিষয়টি তাঁদের কাছে অস্বাভাবিক লেগেছিল। ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, এমন পাশবিক নির্যাতন আগে শোনেননি। শিশু ও তরুণদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে।

তদন্তে নেমে পুলিশ দুই ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিস্তারিত বয়ান নিয়েছে। তাঁদের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা স্টেপলারের আঘাতের ধরন, মরিচের রাসায়নিক প্রভাব এবং অন্যান্য আঘাতের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করছেন। এছাড়া, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া লোহার রড, সাইকেলের চেন ও ছুরিও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন, প্রমাণের ভিত্তিতে চার্জশিট প্রস্তুত করা হবে।আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অপরাধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হতে পারে। যৌন নির্যাতন, শারীরিক আঘাত, ডাকাতি, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র—সব মিলিয়ে দোষ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া, তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায়ও মামলা হতে পারে, কারণ ভিডিও রেকর্ডিংয়ের বিষয়টি গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। আদালতে প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

কেরালার মহিলা কমিশন এই ঘটনায় কড়া নিন্দা জানিয়েছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেছেন, ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ আদালতে মামলা চালানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি। মানবাধিকার সংগঠনগুলিও এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে।পুলিশ জানিয়েছে, জয়েশ ও রেশমিকে আদালতে তোলা হলে তাঁদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হতে পারে। তদন্তকারীরা তাঁদের মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করেছে। এগুলির মধ্যে থেকে আরও প্রমাণ মিলতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া, তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও আর্থিক লেনদেনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad