রাতদিন ওয়েবডেস্ক - যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিকা মণ্ডলের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। নিছক দুর্ঘটনা নাকি খুন, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মরিয়া পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, রহস্যের মূল সূত্র লুকিয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেট সংলগ্ন ঝিলপাড়ের বাথরুমে। তাই সিসিটিভি ফুটেজই এখন তদন্তকারীদের প্রধান হাতিয়ার।গত বৃহস্পতিবার রাতে ঝিলপাড় থেকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী অনামিকা। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। পরিবারের অভিযোগ, মেয়েকে খুন করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে শরীরে আঘাতের চিহ্ন না মিললেও, মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। ভিসেরা রিপোর্টে মদ্যপান বা অন্য কোনও পদার্থের উপস্থিতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঝিলপাড় ও বাথরুম চত্বরে থাকা সিসিটিভি এমনভাবে বসানো যে, সোজা পথ বা পাঁচিল টপকে কেউ ঢুকলেও ধরা পড়বে ক্যামেরায়। তদন্তকারীরা এখন খুঁজছেন, ঘটনার দিন এমন কেউ কি বাথরুমে ঢুকেছিলেন যিনি আর বের হননি। এমন কোনও ব্যক্তির হদিশ মিললে রহস্যভেদ সম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা।ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ঝিলপাড় এলাকায় প্রায় ৪০ জনকে দেখা গিয়েছে সিসিটিভিতে। তাঁদের প্রত্যেককে পুজোর আগেই জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই যাদবপুরের ছয় পড়ুয়াকে জেরা করেছে পুলিশ, যদিও তাঁরা দাবি করেছেন অনামিকাকে চিনতেন না।
এদিকে, অনামিকার পার্স ও চশমা এখনও উদ্ধার হয়নি। সেই খোঁজে ফের ডুবুরি নামানো হতে পারে ঝিলে। কয়েকদিন আগে তল্লাশিতে একজোড়া জুতো উদ্ধার হয়েছে, তবে তা অনামিকার কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়। চশমার কোনও হদিশ মেলেনি।ঘটনার রাতে ডিউটিতে থাকা তিন নিরাপত্তারক্ষীকে ঘটনাস্থলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের বক্তব্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
জাতীয় মহিলা কমিশন এই ঘটনায় স্বতপ্রণোদিত মামলা নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। কমিশনের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা জরুরি।ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রামা ক্লাবের অনুষ্ঠান চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রাত প্রায় ৯টা ৫৫ মিনিটে অনামিকা শৌচালয়ে যাওয়ার কথা বলে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হন। কিছুক্ষণ পরেই তাঁর দেহ ভেসে থাকতে দেখা যায় ঝিলে।
প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে তিনি ঝিলে পড়লেন। পা ফসকে দুর্ঘটনা, নাকি কেউ ঠেলে ফেলল—এই দ্বন্দ্বেই আটকে আছে তদন্ত। পরিবারের দাবি, অনামিকা মদ্যপান করতেন না, তাই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে যাওয়ার তত্ত্ব মানতে নারাজ তাঁরা।পুলিশের হাতে এখন সিসিটিভি ফুটেজই সবচেয়ে বড় ভরসা। ফুটেজে ধরা পড়া প্রতিটি মুখ, প্রতিটি নড়াচড়া খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা বলছেন, এই ভিডিও প্রমাণই হয়তো শেষ পর্যন্ত সত্যিটা সামনে আনবে।

