Type Here to Get Search Results !

কসবা আইন কলেজে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর কলেজ বদলের আবেদন

রাতদিন ওয়েবডেস্ক   -  দুই মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে কসবা আইন কলেজের সেই ভয়াবহ ঘটনার পর, কিন্তু মানসিক আঘাত এখনো তাড়া করে ফিরছে নির্যাতিতা প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে। জুনের ২৫ তারিখ, পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ করতে গিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসেই তিনি ধর্ষণের শিকার হন। অভিযোগ ওঠে কলেজের এক প্রাক্তন ছাত্র ও অস্থায়ী কর্মী মনোজিত মিশ্র এবং তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে, যাদের মধ্যে দু’জন তখনও কলেজের ছাত্র ছিল। ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় এক নিরাপত্তারক্ষীও, যিনি অভিযুক্তদের সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ।পরিবারের দাবি, মেয়ে এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তাই একই জায়গায় ফেরানো মানে তার ট্রমা আরও গভীর করা। নির্যাতিতার বাবা জানিয়েছেন, “আমরা চাই না ও আবার সেই ক্যাম্পাসে যাক। ও এখনো সেরে ওঠেনি।” তাই একাডেমিক বর্ষের মাঝেই কলেজ পরিবর্তনের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ, আইন বিভাগ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কলেজ থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ চাওয়া হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ও আবেদন পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সান্তা দত্ত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আমরা পরিবারের আবেদন পেয়েছি, বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হচ্ছে।” কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা সহ-অধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি, কারণ মামলা বিচারাধীন। তবে কলেজ সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিতার পরীক্ষার জন্য আলাদা সেন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে তাকে ক্যাম্পাসে ফিরতে না হয়।ঘটনার পর কলেজে প্রশাসনিক টানাপোড়েনও শুরু হয়। সহ-অধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় প্রথমে পদত্যাগপত্র জমা দিলেও, গভর্নিং বডির অনুরোধে তা প্রত্যাহার করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, প্রধান অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্রর অতীতের অসদাচরণের অভিযোগ উপেক্ষা করে তাকে চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া এবং ক্যাম্পাসে অবাধ বিচরণের সুযোগ দেওয়া। মিশ্র গ্রেপ্তারের পর চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়, দুই ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়।

২৫ জুনের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে ছাত্র সংগঠন, মানবাধিকার কর্মীরা কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে হলফনামা দিতে নির্দেশ দেয়। জাতীয় মহিলা কমিশনও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রিপোর্ট চায়। বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) কলেজের গভর্নিং বডির মিটিং রেকর্ড, উপস্থিতি রেজিস্টার ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ খতিয়ে দেখে।পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়, কিন্তু সেই ক্যাম্পাসে নয়। তারা আশা করছে, বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত কলেজ পরিবর্তনের অনুমতি দেবে। কলেজ বদলের পরও পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় তারা, যাতে মেয়ের ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এখন সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আবেদনটি বিশেষ বিবেচনায় দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। নির্যাতিতার একাডেমিক রেকর্ড ইতিমধ্যেই যাচাই করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। কলেজ বদলের ক্ষেত্রে মানসিক সুস্থতা ও নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কমিটি বিষয়টি নিয়ে পৃথক বৈঠক করেছে। আবেদনকারীর পরিবারকে নিয়মিত আপডেট জানানো হচ্ছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। কলেজ বদলের অনুমতি পেলে নতুন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।নির্যাতিতার আইনজীবী জানিয়েছেন, “আমরা দ্রুত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি, মেয়ের ভবিষ্যৎ জরুরি।” তিনি বলেন, কলেজ বদল মানে শুধু স্থানান্তর নয়, মানসিক পুনর্গঠনের সুযোগ। মামলার তদন্ত চলাকালীন মেয়েকে নিরাপদ পরিবেশে রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আইনজীবী দাবি করেছেন, প্রশাসনের দেরি মানে মেয়ের ট্রমা দীর্ঘায়িত হওয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। পরিবারও আইনজীবীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। তারা মেয়ের পড়াশোনার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

কলেজের গভর্নিং বডির এক সদস্য জানিয়েছেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকভাবে ভাবছি।” তিনি বলেন, কলেজের ভাবমূর্তি রক্ষার পাশাপাশি নির্যাতিতার স্বার্থও গুরুত্বপূর্ণ। গভর্নিং বডির বৈঠকে কলেজ বদলের আবেদন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সদস্যরা একমত হয়েছেন, নির্যাতিতার নিরাপত্তা ও মানসিক সুস্থতা অগ্রাধিকার পাবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। তারা বলেছে, প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ হলেই ‘নো অবজেকশন’ দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে কলেজের অভ্যন্তরীণ তদন্তও চলছে।মানবাধিকার সংগঠনগুলি কলেজ বদলের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে। সংগঠনগুলির মতে, নির্যাতিতার পুনর্বাসন ও শিক্ষার অধিকার রক্ষা জরুরি। তারা বলেছে, প্রশাসনের দেরি মানে দ্বিতীয়বার নির্যাতনের আশঙ্কা। সংগঠনগুলি বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। তারা নির্যাতিতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজকেও আহ্বান জানিয়েছে। কিছু সংগঠন আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে। তারা বলেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

ছাত্রী সংগঠনগুলিও কলেজ বদলের দাবিকে সমর্থন করেছে। তারা বলেছে, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতা মানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়া। সংগঠনগুলি কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা দাবি করেছে, অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্ররা নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়েছে। তারা বলেছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের দায়িত্ব। সংগঠনগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বলেছে, শিক্ষার অধিকার রক্ষায় প্রশাসনকে সক্রিয় হতে হবে।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad