রাতদিন ওয়েবডেস্ক: প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা দূষণ ও ভূগর্ভস্থ চিরাচরিত শক্তির নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পর থেকে উদ্ধার করতে দূষণ হীন অফুরান শক্তির উৎস আবিষ্কার করল আমেরিকা। ফিউশন বিক্রিয়ায় দূষণমুক্ত অফুরান শক্তির উৎসের সন্ধান পেল ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লিভার মোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা।
ফিউশন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপ থেকে বিদ্যুৎ চালনার সমস্ত শক্তি পাওয়া যেতে পারে বলে দাবি জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৩০ সাল থেকে বিকল্প শক্তি তথা ফিউশন বিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে কোনরকম শক্তির উৎপত্তি হবে কিনা তা নিয়ে দীর্ঘ ৯০ দিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুফল পেলেন এলএল এন এল এর বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব বাণিজ্যের দরবারে এই দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাণিজ্যিক বাজারে লাভজনক বলে ভবিষ্যতের দাবি জানিয়েছেন ফিউশন শক্তি মাত্রক সখি জেনিফার গ্রান হোম। ইতিমধ্যে ভবিষ্যতের লাভজনক চিন্তাভাবনা এ মাথায় রেখে বিশ্ব বাজারের বড় মাপের বিল গেটস, জেফ বেজোসের মতো বাণিজ্যিকরা বিনিয়োগের জন্য ভাবছেন।
জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ভবিষ্যতের জন্য এবং পরিবেশ রক্ষার্থে এক অগ্রগনি ভূমিকা পালন করবেন বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। ফিউশন বিক্রিয়ায় তৈরি শক্তি থেকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হবে শূন্য। সেই তুলনায় অন্যান্য তাপ উৎপাদক জ্বালানি থেকে নিঃসৃত হওয়া গ্রীন হাউস গ্যাস ও কার্বন ডাই অক্সাইড এর মত কার্বন মিশ্রিত গ্যাস গুলি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লিভার মোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর কিম বুদিল বলেন "মানবজাতির ইতিহাস সবচেয়ে কঠিন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলো মধ্যে এটি অন্যতম।"
ফিউশন পদ্ধতিতে পরমাণুর মধ্যে থাকা নিউক্লিয় অংশ জুড়ে গিয়ে একটি বড় পরমাণু তৈরি হয়। তার ফলে মোট ভরের সামান্য তারতম ঘটে। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় বিপুল শক্তি। তোমার তো লাগবেই আইনস্টাইনের ভর ও শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুযায়ী ভর আর শক্তি একটি অপরটিতে পরিবর্তিত হতে পারে অর্থাৎ দুটি পরমাণু ভেঙে একটি বড় পরমাণু তৈরি হওয়ার সময় ভরের যে ফারাক হয় তার থেকে জন্ম নেয় ওই বিপুল শক্তি যা ব্যবহার করে অফুরান বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব। গবেষণাগারে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটাতে বাইরে থেকে বিপুল পরিমাণের তাপ প্রয়োগের প্রয়োজন প্রায় 10 কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। গবেষণাগারে লেজার পদ্ধতিতে সেই তাপের যোগান দেওয়া হয়েছে তবে এর একটা সুবিধাও রয়েছে। ফিউশন বিক্রিয়া একবার চালু হয়ে গেলে পরবর্তী ধাপের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সেই বিক্রিয়া থেকেই পাওয়া যায় তার জন্য বাইরে থেকে কোন রকম আলাদা শক্তির প্রয়োজন পড়ে না। সবকিছু মিলিয়ে ফিউশন প্রক্রিয়া ভবিষ্যতের জ্বালানি সমস্যা ও পরিবেশ দূষণের হার থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে। এর পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মতো পারমাণবিক হাতিয়ার সমৃদ্ধ দেশগুলির যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যে তাপের প্রয়োজন তার যোগান পাওয়া যাবে এই ফিউশন বিক্রিয়া থেকে। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক দিকে ফিউশন বিক্রিয়া কতটা কাজে লাগাতে পারবে তা নিয়ে গবেষণা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।


