রাতদিন ওয়েবডেস্ক : সম্প্রতি রাজ্যের সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যে চরম বিতর্ক শুরু হয়েছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি ভয়াবহ অসঙ্গতি। অভিযোগ উঠেছে যে, ফুল মার্কস বা তার কাছাকাছি নম্বর অর্জন করা সত্ত্বেও একাধিক যোগ্য প্রার্থীকে ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়নি। অথচ, লিখিত পরীক্ষায় তাদের তুলনায় অনেক কম নম্বর পাওয়া বহু প্রার্থীকে স্বচ্ছন্দে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বঞ্চিত প্রার্থীরা সম্মিলিতভাবে এই অভিযোগ তুলেছেন, যা রাজ্যের চাকরির বাজারে এক গভীর সংকট তৈরি করেছে। সর্বোচ্চ মেধা থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে যাওয়া প্রমাণ করে যে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা এবং পরিশ্রমের কোনো মূল্য নেই; এর পেছনে অন্য কোনো অজানা শক্তি বা পদ্ধতি কাজ করছে।
বহু উচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রার্থীর বাদ পড়া এবং নিম্ন নম্বরপ্রাপ্তদের সুযোগ পাওয়া—এই ঘটনা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা ও মানদণ্ড নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে। যদি নিয়োগের মূল উদ্দেশ্য মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই করা হয়, তাহলে সর্বোচ্চ স্কোর করা প্রার্থীদের বাদ দেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়? এই বৈপরীত্যের কারণে তীব্র জনমানসে ধারণা তৈরি হয়েছে যে, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সুনির্দিষ্ট গোপন কৌশল বা 'সেটিং'-এর ওপর নির্ভর করে চলছে, যেখানে মেধার কোনো স্থান নেই। এই ঘটনাটি শুধু প্রার্থীর জীবন নয়, বরং সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে নষ্ট করছে। এত পরিশ্রম করে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পরও যখন সুযোগ মেলে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই তরুণ সমাজ পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এই গুরুতর অভিযোগগুলোর বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দেওয়ায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির জল্পনা আরও জোরালো হচ্ছে। এই অনিয়মগুলো রাজ্যের যুব সমাজের মধ্যে গভীর হতাশা সৃষ্টি করেছে এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। যারা দিনের পর দিন কঠোর অধ্যবসায় করে ভালো ফল করেছে, তারা দেখছে যে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই পরিস্থিতিতে, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী সংস্থাকে অবিলম্বে এই সম্মিলিত অভিযোগের গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন করতে হবে। নিয়োগ প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে স্বচ্ছ ও সবার সামনে উন্মুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো প্রার্থীর মনে কোনো ধরনের সন্দেহ সৃষ্টি না হয়। মেধা ও যোগ্যতা যেন শেষ পর্যন্ত সম্মান পায় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়—এটাই রাজ্যের বঞ্চিত তরুণ সমাজের একমাত্র দাবি। এই অনিয়ম দূর না হলে, রাজ্যের যুবশক্তির অপচয় হবে এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের আস্থা চিরতরে হারিয়ে যাবে।

