রাতদিন ওয়েবডেস্ক : গতকাল, ১৭ নভেম্বর ২০২৫-এ, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’-এর দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেছে। এই রায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সুদূরপ্রসারী এবং ঐতিহাসিক মোড় এনে দিয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, বিচারব্যবস্থা এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। গত বছর (২০২৪) ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে নির্বাসনে রয়েছেন, এবং তাঁর অনুপস্থিতিতেই এই রায় ঘোষণা করা হলো। মূলত, গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংস দমন-পীড়নের ঘটনায় উস্কানি দেওয়া, হত্যার নির্দেশ এবং নৃশংসতা প্রতিরোধে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তাঁর সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (IGP) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হওয়ায় তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই রায় ঘোষণার পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বিক্ষোভ ও সহিংসতার খবর মিলেছে। তবে, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পতন ঘটিয়ে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বিরোধী দলগুলো এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক ন্যায়বিচার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। অন্যদিকে, নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগ এই রায়কে সম্পূর্ণ ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসন’ বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাইব্যুনালের ন্যায্যতা নিয়ে। পলাতক আসামি হওয়ায় শেখ হাসিনা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন কিনা, সেই আইনি দিক নিয়েও নানা মহলে আলোচনা চলছে। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে, যা ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (ICG) মনে করছে, এই মৃত্যুদণ্ডের রায় শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনাকে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে এবং এই রায় কার্যকর হলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আরও কঠিন হয়ে উঠবে। সব মিলিয়ে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া এই রায় দেশের বিচারিক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা এবং এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির গতিপথ নির্ধারণে এক নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে।

