Type Here to Get Search Results !

ল্যাপটপ এর ক্ষেত্রে এই ভুলগুলো যত দ্রুত এড়াবেন তত ভালো

রাতদিন ওয়েবডেস্ক   - ল্যাপটপ এখন কাজের সঙ্গী, পড়াশোনার টুল, আর বিনোদনের স্ক্রিন। তাই সামান্য ভুল ব্যবহারও বড় ক্ষতি ডেকে আনে, আয়ু কমে যায়, পারফরম্যান্স পড়ে যায়। ভাল খবর হলো, কয়েকটি সহজ অভ্যাস বদলালেই ব্যাটারি, কুলিং সিস্টেম, আর স্টোরেজ অনেকদিন ঠিকঠাক কাজ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপ থেকে সুরক্ষা আর অযথা ডিপ ডিসচার্জ এড়ানোই প্রথম নিয়ম। এর সঙ্গে সঠিক চার্জার ব্যবহার, পরিষ্কার এয়ারফ্লো, নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট জুড়ে দিলে ফল সবচেয়ে বেশি। তাই আজ থেকেই ছোট ছোট সতর্কতা নিন, তাতে বড় খরচ বাঁচবে। আপনার কাজও চলবে মসৃণ, নির্ভার।

ল্যাপটপ ব্যাটারির সবচেয়ে বড় শত্রু হলো তাপ, তাপ বাড়লে কেমিস্ট্রি দ্রুত ক্ষয় হয়, ক্যাপাসিটি পড়ে যায়। তাই নরম পৃষ্ঠ, বিছানা, কম্বল, বালিশের ওপর ল্যাপটপ রাখবেন না, ভেন্ট ব্লক হলে ফ্যান ঠিকমতো বাতাস টানতে পারে না। টেবিলের মতো শক্ত, সমান, ফ্ল্যাট জায়গায় ব্যবহার করুন, ল্যাপ ডেস্ক বা কুলিং প্যাড ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। ঘরের তাপমাত্রা আর আর্দ্রতা সামঞ্জস্যেও নজর দিন, গরম ঘরে স্ট্রেস বেড়ে যায়। প্লাগইন থাকলে পারফরম্যান্স মোডে গরমও বেশি, তাই হালকা কাজের সময় ব্যালান্সড প্রোফাইল নিন। দীর্ঘ সময়ের গেমিং বা রেন্ডারিংয়ে ধুলো জমে আছে কি না তা দেখে নিন। কুলার গ্রিল আর ভেন্ট পরিষ্কার থাকলেই সিস্টেম নিশ্বাস নিতে পারে।

চার্জিং অভ্যাসে গোল বাধে, আর সেখানেই ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়। আধুনিক লি আয়ন ব্যাটারিতে বারবার শূন্যে নামানো ক্ষতিকর, গভীর ডিসচার্জে কেমিস্ট্রি স্ট্রেস বাড়ে। অনেক সময় ২০ শতাংশের আশপাশে ব্যাটারি সেভার চালু রাখতে পারলে ভালো, শূন্যে নামানো এড়ানো যায়। একইভাবে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে চার্জ থামানো স্বাস্থ্যকর, পুরো সময় ১০০ শতাংশে গেঁথে রাখা দরকার নেই। তবে জরুরি কাজ হলে প্লাগ ইন রাখা ক্ষতি করে না, ক্ষতি করে তাপ, তাই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণই আসল বিষয়। কিছু ব্র্যান্ডে ব্যাটারি হেলথ মোড আছে, ম্যাকবুকে অপটিমাইজড চার্জিং, উইন্ডোজ ল্যাপটপে ভেন্ডর টুল, সেগুলো অন রাখুন। চার্জিং অভ্যাসে ধারাবাহিকতা রাখলে ব্যাটারি সাইকেল সাশ্রয় হয়।

অরিজিনাল চার্জার ব্যবহারে কোনো ছাড় নয়, ভোল্টেজ আর কারেন্টের সামান্য হেরফেরও ক্ষতি করে। ইউএসবি সি চার্জিং হলেও ল্যাপটপের রেটিং মিলিয়ে নেওয়া জরুরি, ওয়াটেজ কম হলে গরম বাড়ে, চার্জিং লম্বা হয়। অজানা ব্র্যান্ড বা সস্তা অ্যাডাপ্টার তাড়াতে হবে, প্রোটেকশন সার্কিট ঢিলে হলে ওভার ভোল্টেজে বড় ক্ষতি হয়। ট্রাভেলে সার্জ প্রটেক্টর ব্যবহার করলে নিরাপত্তা বাড়ে, অনিয়মিত পাওয়ার সাপ্লাইয়ে উপকার মেলে। লম্বা সময় প্লাগ ইন থাকলে ব্যাটারি হেলথ মোড অন থাকুক, তাতে টপ অফ চার্জিং নিয়ন্ত্রিত থাকে। কেবল আর পোর্ট ঢিলে হলে হিট স্পট তৈরি হয়, তাই সেগুলোও দেখে নিন। চার্জার যতটা সঠিক, ব্যাটারির জীবন ততটাই দীর্ঘ।

সফটওয়্যার অপ্টিমাইজেশনে ব্যাটারি বাঁচে, পারফরম্যান্সও টিকে থাকে। ব্যাকগ্রাউন্ডে চলা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ বন্ধ রাখুন, সিঙ্ক আর নোটিফিকেশন কমান। স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমালেই শক্তি সাশ্রয় হয়, অটো ব্রাইটনেস থাকলে কনসিস্টেন্ট থাকে। পাওয়ার সেভার বা ব্যাটারি সেভার মোড ২০ থেকে ৩০ শতাংশে অটো ট্রিগার করলে লাভ বেশি, হাইবারনেট থ্রেশহোল্ড নির্দিষ্ট রাখুন। উইন্ডোজ, ম্যাকওএস, লিনাক্স যেটাই হোক, সিস্টেম আপডেট আর ড্রাইভার আপডেট ব্যাটারি ব্যবহারে প্রভাব ফেলে। গ্রাফিক্স সুইচিং সঠিক হলে ডিসক্রিট জিপিইউ অযথা জেগে থাকে না। ব্রাউজারে অপ্রয়োজনীয় ট্যাব আর হাই রিফ্রেশ রেট কমিয়ে রাখুন। সফটওয়্যারই অনেক সময় হার্ডওয়্যারের ভার কমিয়ে দেয়।

স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকলে ল্যাপটপের গতি ও স্থায়িত্ব কমে যায়। অপ্রয়োজনীয় ফাইল জমলে এসএসডি ওয়্যার লেভেলিং ব্যাহত হয়, পারফরম্যান্স পড়ে। ডিস্ক ক্লিনআপ, টেম্প ফাইল ডিলিট, ইনডেক্সিং নিয়ন্ত্রণে রাখলে প্রসেসিং হালকা হয়। ভারী সফটওয়্যার আনইনস্টল করলে র‍্যাম ও সিপিইউ চাপ কমে যায়। স্টার্টআপ অ্যাপ কমালে বুট টাইম কমে, ব্যাটারি সাশ্রয় হয়। ডিস্কে পর্যাপ্ত খালি জায়গা থাকলে সিস্টেম আপডেটও দ্রুত হয়। স্টোরেজ পরিষ্কার রাখলে ল্যাপটপ দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকে।

ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী পাওয়ার প্রোফাইল বদলানো জরুরি, এতে তাপ নিয়ন্ত্রণ হয়। অফিস কাজের সময় ব্যালান্সড মোড, গেমিংয়ে পারফরম্যান্স মোড ব্যবহার করুন। ভিডিও এডিটিং বা রেন্ডারিং চলাকালীন কুলিং প্যাড ব্যবহার করলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ব্যাটারি সেভার মোডে স্ক্রিন ব্রাইটনেস, রিফ্রেশ রেট কমে যায়। হাই রিফ্রেশ রেটে ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়, তাই কনটেন্ট ভিউয়ে ৬০ হার্জ যথেষ্ট। টাচপ্যাড অ্যানিমেশন, জেসচার বন্ধ করলে প্রসেসর লোড কমে। ব্যবহারের ধরন বুঝে সেটিংস বদলালে ব্যাটারি আয়ু বাড়ে।

ল্যাপটপের ভেন্ট, ফ্যান, হিটসিঙ্কে ধুলো জমলে কুলিং সিস্টেম ব্যাহত হয়। কয়েক মাস অন্তর সঙ্কুচিত বাতাসে ধুলো পরিষ্কার করলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। পুরনো মেশিনে থার্মাল পেস্ট ক্লান্ত হলে টেকনিশিয়ান দিয়ে বদলে নেওয়া ভালো। কিবোর্ড, টাচপ্যাড, পোর্ট পরিষ্কার রাখলে তাপ সঞ্চালন বাধা পায় না। টেবিলের নিচে ফাঁকা থাকলে এয়ারফ্লো ভালো হয়, রাবার ফিট উপকারী। অপ্রয়োজনীয় ডাস্ট ফিল্টার ব্লকেজ বাড়ায়, তাই ব্যবহার না করাই ভালো। পরিষ্কার মানেই ঠান্ডা, ঠান্ডা মানেই টেকসই।

ব্যাটারি বদলের সময় অফিসিয়াল গাইডলাইন অনুসরণ করা জরুরি, এতে নিরাপত্তা থাকে। কিছু ল্যাপটপে ব্যাটারি ইনটারনাল, তাই টেকনিশিয়ান ছাড়া খোলা ঠিক নয়। বদলের পরে তাপমাত্রা, চার্জিং সময়, ড্রেন টাইম লক্ষ্য করুন। প্রয়োজনে ফার্মওয়্যার আপডেট, পাওয়ার প্রোফাইল রিসেট করুন। পুরনো ব্যাটারি নিরাপদভাবে রিসাইকেল করুন, ঘরে জমিয়ে রাখবেন না। ব্যাটারির জীবনচক্র দায়িত্ব নিয়ে শেষ করাই পরবর্তী ব্যাটারির প্রতি দায়বদ্ধতা। সঠিক বদল মানেই স্থায়িত্বের নতুন অধ্যায়।

দৈনন্দিন রুটিনে যত্ন আনলে ভুল কমে, আয়ু বাড়ে, পারফরম্যান্স স্থিতিশীল থাকে। সকালে প্লাগ ইন করে কাজ শুরু করুন, দুপুরে চার্জ ৮০ হলে খুলুন। বিকেলে ব্যাটারি সেভার চালু রাখুন, রাতে প্রয়োজনে আবার প্লাগ ইন করুন। শুক্রবারে ধুলো পরিষ্কার করুন, রবিবারে সফটওয়্যার ক্লিনআপ দিন। মাসের শেষে ব্যাটারি রিপোর্ট দেখে অভ্যাস বুঝে নিন। ব্যাগে ঢোকানোর আগে স্লিপ বা হাইবারনেট দিন, ঢাকনা বন্ধ করলেই ঘুমায় না। এই রুটিনে ল্যাপটপ দীর্ঘদিন সঙ্গ দেয়, খরচও কমে।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad