রাতদিন ওয়েবডেস্ক - পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সদ্য শেষ হয়েছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা আইনি জটিলতার পর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি খোয়াতে হয়। এর মধ্যে প্রায় ১৩ হাজারের বেশি ‘আন-টেন্টেড’ বা দুর্নীতির অভিযোগমুক্ত চাকরিহারারা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজ নিজ স্কুলে কাজ চালানোর অনুমতি পেলেও, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক হয়।এসএসসি সূত্রে জানা গেছে, এবারের পরীক্ষায় মোট ৫ লক্ষ ৬৬ হাজার প্রার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে প্রায় ১০০ শতাংশ চাকরিহারাই পরীক্ষায় বসেছেন। তবে প্রায় ২ হাজার চাকরিহারা আগের চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদন করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে, যা তাদের পুনর্নিয়োগের সম্ভাবনা বাড়ায়।
এবার ‘যোগ্য’ চাকরিহারাদের একাংশ নতুন দাবি তুলেছেন—তাদের যেন আগের স্কুলেই পুনর্বহাল করা হয়। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, গড়ে সাত বছর ধরে তারা সেই স্কুলে পড়িয়ে এসেছেন, চাকরি পাওয়ার পর স্কুলের আশেপাশেই বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন, সন্তানদের পড়াশোনা ও পারিবারিক জীবন সেই চাকরিকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে।তাদের বক্তব্য, নিয়োগ দুর্নীতিতে কোনও যোগ না থাকা সত্ত্বেও তাদের ফের পরীক্ষায় বসতে হয়েছে। তাই যিনি যে স্কুলে ছিলেন, সেখানেই স্কুল বাছাইয়ের সুযোগ দেওয়া হোক। এতে শিক্ষক ও স্কুল—দুই পক্ষেরই সুবিধা হবে বলে তাদের দাবি।
তবে বিকাশ ভবনের কর্তারা জানিয়েছেন, এসএসসি-র বিধি অনুযায়ী র্যাঙ্ক অনুসারে কাউন্সেলিংয়ে যে স্কুল পাওয়া যাবে, সেখানেই নিয়োগ হবে। পুরনো স্কুলে ফেরানোর দাবি মানতে গেলে বিধি পরিবর্তন করতে হবে, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাঝপথে সম্ভব নয়।চাকরিহারাদের সংগঠনগুলোর দাবি, পুনর্বহাল না হলে মানসিক বিপর্যয় আরও বাড়বে। দীর্ঘদিনের সম্পর্কিত স্কুল পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে শিক্ষকের আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা। অনেকেই বলছেন, নতুন স্কুলে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে এবং শিক্ষার মানও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
একজন চাকরিহারা শিক্ষক জানিয়েছেন, আমি সেই স্কুলে সাত বছর পড়িয়েছি, ছাত্ররা এখনও মনে রাখে। তিনি বলেন, নতুন স্কুলে গেলে সেই সম্পর্কের ভিত্তি ভেঙে যাবে।তাঁর মতে, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পুরনো স্কুলে ফেরার সুযোগ না পাওয়া অন্যায়। তিনি আরও বলেন, আমার পরিবার, সন্তান, জীবন—সবই সেই স্কুলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।আমার বাড়ি স্কুলের পাশে, প্রতিদিনের যাত্রা সহজ ছিল,তিনি জানান। নতুন স্কুলে গেলে যাতায়াতের সমস্যা, পারিবারিক চাপ বাড়বে।এসএসসি যদি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি না দেখায়, আমরা আইনি পথে যাব।শিক্ষাবিদদের মতে, পুনর্বহাল দাবির পেছনে মানবিক যুক্তি থাকলেও প্রশাসনিক বাধা রয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নিয়মের বাইরে যাওয়া কঠিন। তবে তারা বলছেন, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে নীতিগত পরিবর্তন জরুরি।
এসএসসি-র এক প্রাক্তন কর্মকর্তা বলেন, যোগ্য চাকরিহারাদের জন্য আলাদা কাউন্সেলিং ব্যবস্থা ভাবা যেতে পারে।যারা দুর্নীতিমুক্ত, তাদের পুরনো স্কুলে ফেরার সুযোগ বিবেচনা করা উচিত।এতে স্কুলের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে।নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রেখে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োগ সম্ভব।প্রশাসন চাইলে বিধি সংশোধন করে এই দাবি পূরণ করতে পারে।তবে তা করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আইনি সহায়তা দরকার।এই বিতর্ক শিক্ষাক্ষেত্রে নীতিগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে।