রাতদিন ওয়েবডেস্ক : একেরপর এক রহস্যময় মৃত্যু। যার কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সন্দেহ করা হচ্ছে সিরিয়াল কিলার দের।একের পর এক অগুন্তিক গাছের রহস্যময় মৃত্যুকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পরিবেশপ্রেমিদের মধ্যে। দুধারে গাছে ভরা রাস্তা হঠাৎ দুটো গাছে এসে ঠেকলো কিভাবে? ছাওনি দেওয়া রাস্তায় আজ রোদ ঝলমল করছে। কেনো এমন হচ্ছে? গাছেদের কথা বলতে পারেনা তারা অভিযোগ করতে পারবেনা বলে একেরপর এক রহস্যময় মৃত্যুর শিকার হতে হচ্ছে তাদের? এই মৃত্যুগুলোর পিছনে কোন চক্র আছে তা নিয়ে তদন্ত কেনো হচ্ছেনা ? এরমই বহু প্রশ্ন করছেন পরিবেশ প্রেমীরা।বনগাঁ মহকুমার বনগাঁ-বাগদা সড়কের দু’পাশে থাকা বেশ কিছু গাছের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ পরিবেশপ্রেমীরা।তাঁরা অভিযোগ করে গাছেদের এমন মৃত্যুকে নিয়ে।বন দফতরের বনগাঁর রেঞ্জ অফিসার সঙ্গীতা ভৌমিক বলেন, ‘‘বনগাঁ-বাগদা সড়কে গাছের মৃত্যুর খবর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’স্থানীয়রা জানায়, বনগাঁ থানার বাজিতলা এলাকায় রাস্তার দু’ধারে থাকা গোটা ২০ শিরীষ গাছের মধ্যে অনেকগুলিই মারা গিয়েছে। কয়েকটি গাছ তো মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে।কত গাছ ওই এলাকায় মৃতপ্রায়।
যেগুলো বেঁচে তারা পাতাহীন।এর আগেও গাইঘাটার ঝাউডাঙা পঞ্চায়েত এলাকায় রামনগর রোডের দু’পাশে থাকা ৩২টি গাছ মারা গিয়েছিল।ওই একই রাস্তার দু’পাশে রামনগর পঞ্চায়েত এলাকাতেও কিছু গাছ মারা গিয়েছিল।হাবড়া থানার কুমড়া পঞ্চায়েতের বাঘাডাঙা মোড় থেকে মাকালতলা যাওয়ার রাস্তার দু’ধারে ২১টি গাছের মৃত্যু হয়। আরও বহু জায়গায় কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই বহুগাছ কেটে ফেলা হয়েছিল বলে অভিযোগ।মানুষ নয়, পর পর গাছের মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন বনগাঁর পরিবেশপ্রেমীরা। গত দু’বছরে মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তার দু’পাশে প্রচুর গাছের রহস্য-মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। এ বার বনগাঁ মহকুমার বনগাঁ-বাগদা সড়কের দু’পাশে থাকা বেশ কিছু গাছের মৃত্যুর ঘটনায় মন খারাপ পরিবেশপ্রেমীদের। ক্ষুব্ধ পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, কী কারণে গাছ মারা গিয়েছিল, কোনও চক্র জড়িত কি না কিছুই জানা যায়নি। কোনও তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ। বন দফতরের বনগাঁর রেঞ্জ অফিসার সঙ্গীতা ভৌমিক বলেন, ‘‘বনগাঁ-বাগদা সড়কে গাছের মৃত্যুর খবর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’গাছের মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। অবসরপ্রাপ্ত জীববিজ্ঞানের শিক্ষক তথা পরিবেশকর্মী অজয় মজুমদারের কথায়, ‘‘কিছু ছত্রাকের সংক্রমণে স্থানীয় ভাবে গাছের মৃত্যু হয়। যে অঞ্চলে গাছের মৃত্যু হয়, সেখানকার সংক্রামিত গাছের বাকল তুলে এনে অন্য গাছের বাকল তুলে ঢুকিয়ে দিলে সংক্রমণ শুরু হয় এবং পরে গাছ মরে যেতে পারে।’’ অন্য আশঙ্কার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গাছের শিকড়ে ডিজ়েল ঢেলে দিলেও গাছ মারা যায়। কিছু মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই কাজ চলছে, এমনটা হতে পারে। প্রাকৃতিক ভাবেও গাছ মারা যেতে পারে। তবে সে আশঙ্কা এ ক্ষেত্রে খুবই কম। শাসনে রাস্তার উপরে অন্তত শ’তিনেক গাছ সার দিয়ে মারা গিয়েছে। কারণ আজও জানা যায়নি।’’ তাঁর মতে জেলায় এখনও যতগুলি গাছের মৃত্যু হয়ছে তাদের তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা উচিত।পরিবেশকর্মীদের অনেকের মতে ,সাইটালিডিয়াম ডিমিডিয়াটাম ছত্রাকের আক্রমণে ডাইব্যাক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্ধমানে বহু সারি বদ্ধ শিরীষ গাছ মারা গিয়েছিল। মানুষও এই রোগের শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা জানাচ্ছেন তারা।পশ্চিমবঙ্গের একাধিক চা বাগানে এই ছত্রাকের আক্রমণের ফলে চা শ্রমিকদের হাত পায়ের নখ নষ্ট হয়েছে।অজয়ের মতে, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যের ওমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সাইটালিডিয়াম ডিমিডিয়াটাম ছত্রাকই শিরীষ গাছের মৃত্যুর কারণ। এই ছত্রাক আট ধরনের গাছের উপরে হামলা চালাচ্ছে। এই ছত্রাকের আক্রমণ শুরু হতেই পলিফাঙ্গাস আক্রমণ চালায়। গাছ ছাতুর মতো গুঁড়ো হয়ে যায়। এক সময়ে ভেঙে পড়ে।’’ পরিবেশ গবেষকদের মতে এই বিষয় নিয়ে তদন্ত না হলে কোনরকম ব্যাবস্থা না নেওয়া হলে কাঠ পাঁচারকারিরা এই ছত্রাক গুলি সংগ্রহ করে গাছের কাণ্ডে খানিকটা গর্ত করে তা ছড়িয়ে দিলে পুরো গাছে সংক্রমণ ধরে যেতে পারে বলে আশঙ্কা।স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শিরীষ গাছগুলি কয়েক মাস আগেও সতেজ ছিল। এখন রহস্যময় ভাবে মারা যাচ্ছে।অনেকে মনে করছেন, গাছের অকাল মৃত্যুর পিছনে কাঠ পাচারকারীদের হাত থাকতে পারে। তারাই রোগবাহী ছত্রাক ব্যবহার করে গাছের মৃত্যু ঘটাতে পারে বলে তাঁদের অনুমান। বাসিন্দাদের অনেকের প্রশ্ন, ‘‘প্রাকৃতিক কারণেই যদি গাছের মৃত্যু হয়ে থাকে, তা হলে বাকিগুলি সুস্থ আছে কী করে! গাছ মারার পিছনে মানুষেরই ভূমিকা আছে।’’ পরিবেশকর্মী দের আশঙ্কা এলাকায় জনগণের সংখ্যা বেড়েছে,বহু মানুষ রাস্তার ধারেধারে গ্যারেজ বানাচ্ছে,ট্রাক রাখার পার্কিং তৈরি হয়েছে তাই হয়তো নিজেদের জন্য এমন কু কর্ম করছে মানুষে।বনগাঁ-বাগদা সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করা মানুষ, যানবাহন চালকেরা জানালেন, ‘‘যাতায়াতের সময়ে খুবই আতঙ্কে থাকি। কারণ, মরা গাছের ডাল ভেঙে ঝুলে আছে। যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে।’’ ঝুলন্ত ডাল কেটে ফেলার দাবিও তুলেছেন তাঁরা। যার ফলে জীবন ঝুঁকিও হতে পারে।