রাতদিন ওয়েবডেস্ক : চতুর্দিকে আলোর রোশনাই। রাস্তা জুড়ে অসংখ্য মানুষের সমাগম আলোক নগরী চন্দননগরে। আবারও এক বছরের অপেক্ষায় বুক বেঁধে, চোখের কোনে জল নিয়ে দশমীতে মা জগদ্ধাত্রীকে বিদায় জানালো চন্দননগরবাসী। মূলত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মন্ডপগুলিতে শুরু হয় প্রতিমা বরণ ও সিঁদুর খেলার মতো চিরাচরিত প্রথা। গঙ্গার ঘাট গুলিতে দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় মায়ের নিরঞ্জন। শয়ে শয়ে মানুষ রাস্তায় সন্ধ্যার পর আলো সহযোগে শোভাযাত্রায় বেরিয়ে পড়ে । যা দেখতে উপচে পড়ে মানুষের ঢল। একাধিক পুজো কমিটি বিসর্জনের শোভাযাত্রায় আলো দিয়ে তৈরি করেছিলেন নানান থিম।চন্দননগরের উল্লেখযোগ্য পুজো কমিটি সুভাষপল্লী উত্তরপাড়া সার্বজনীন এর প্রতিমা বের করার সময় দেখা যায় জনশ্রোত । এটি শহরের একটি অন্যতম প্রতিমা যা বের করার সময় ট্রেন লাইন টপকে যাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। মূলত ওই সময় রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখেন। রীতি অনুযায়ী প্রতিমা কাঁধে নিয়ে প্রথমে ট্রেন লাইনের উপরে তোলা হয়। তারপর লাইন ধরে প্রায় ২০০ মিটার হাঁটা পথ।
লাইনের একদম ওপরে দাঁড়িয়ে তাকে একটি ট্রাক আর তাতেই তোলা হয় মা জগদ্ধাত্রীকে। এর পাশাপাশি মানুষের প্রবল আগ্রহের একটি পূজা কমিটি হলো ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলা সার্বজনীন। সেখানে প্রথাগত নিয়ম ভেঙ্গে পুরুষ জাতি মেতে ওঠে প্রতিমা বরণে। তারা কাপড় শাঁখা সিঁদুর পড়ে বরণ করেন, দেন কনকাঞ্জলিও। এই প্রথা দেখতে গোটা চন্দননগরবাসী যেন আকুল হয়ে ভিড় জমান।ঠিক সন্ধ্যা ছটায় শুরু হয় শোভাযাত্রা। মোট ৬২ টি বারোয়ারি পূজো এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। সারারাত ধরে আলোর সাজানো ট্রাক দাপিয়ে চলে রাস্তাঘাট। সিনেমা নগরী হলিউড’ থেকে ‘মহাভারতের অর্জুনের রথ’, ‘ভূতের বাড়ি’ এবং ‘ব্যাঙের বাড়ি’ থিম হয়েছিল। এছাড়াও শোভাযাত্রায় উল্লেখযোগ্য আলোর থিম, ‘জল জীবন’, ‘বন্ধুত্বের আহ্বান’, ‘মিকি মাউস’ সহ নানান কমিক্স চরিত্র, ‘পশু- পাখি’, ‘পৌরাণিক কাহিনি’ ইত্যাদি। এছাড়াও সীমান্তে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীর লড়াই, বন্ধুত্বের ছবি, আলো দিয়ে তৈরি ফুল ও ফল, সাম্বা নৃত্য, মাইথলজিক্যাল ওয়ার্ল্ডও থিম তৈরি করেছিল কমিটিগুলি। রাত যত বেড়েছে শোভাযাত্রায় দর্শনার্থীর সংখ্যা তত বেড়েছে। সবটা মিলে জগদ্ধাত্রী পুজোর কয়েকটা দিন চন্দননগর যেন হয়ে ওঠে উৎসবনগরীর প্রাণকেন্দ্র। বৃহস্পতিবার চোখের জলে এক বছরের প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করলে চন্দননগরবাসী।